Logo

রাজধানী

দুর্গাপূজার আগে ব্যস্ত সময় পার করছেন শাঁখারীবাজারের প্রতিমা শিল্পীরা

জান্নাতুন নাইম

জান্নাতুন নাইম

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১৩

দুর্গাপূজার আগে ব্যস্ত সময় পার করছেন শাঁখারীবাজারের প্রতিমা শিল্পীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এ উৎসবকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রাজধানীর শাঁখারীবাজারের প্রতিমাশিল্পীরা। 

শারদীয় মহোৎসবকে ঘিরে শাঁখারীবাজারে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমার সাজ-সরঞ্জাম কিনতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। দেবীর সরঞ্জামের সঙ্গে সঙ্গে নিজের জন্যও কেনাকাটা করছেন ভক্তরা।

সরেজমিন শাঁখারীবাজার ও তাঁতিবাজারের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। কোনোটার কাজ কাঁদামাটি লেপে দেওয়া পর্যন্ত, কোনোটার কাঠামো বানিয়ে রাখা হয়েছে, আবার কোনোটার শেষ ফিনিশিং দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন তারা। কাদা-মাটি, মাটির কাপড়, বাঁশের চটা, ধানের খড় এবং সুতলি দিয়ে গড়ে উঠছে প্রতিমার কাঠামো। এরপর করা হবে রং। তারপর নানারকম অলংকারে সাজবে দেবী দূর্গা।

দুর্গার পাশাপাশি কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমাও তৈরি করছেন শিল্পীরা। প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমার দাম আকার-আকৃতির ওপর নির্ভর করে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। 

এবার পূজার সময় ১৫ দিন এগিয়েছে। দেশের পরিস্থিতির কারণে প্রথমে কেউ পূজার প্রস্তুতি নেনি। শেষ সময়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে কাজের চাপ একটু বেশি। এ বিষয়ে শাঁখারীবাজারের প্রতিমাশিল্পী সুব্রত পাল বলেন, ‘এবার ১২টি প্রতিমার কন্টাক্ট নিয়েছি, ঢাকার শাঁখারীবাজারসহ ১০টি। ঢাকার বাইরে দুইটি। প্রতিমা তৈরির জন্য মানিকগঞ্জ থেকে মাটি কিনে আনা হয়। সেটা পিকআপ ভ্যানে বা ট্রাকে করে ঢাকায় আনা হয়। এখন শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।’

জিনিসপত্রের দাম এখন বেশি। প্রতিমা তৈরিতে প্রতিমাশিল্পীরা ২০-২৫ হাজার টাকা চার্জ করছেন। আগের মতোই পারিশ্রমিক রয়েছে, তবে মান কমেছে। আরেক প্রতিমাশিল্পী গোপাল চন্দ্র পাল বলেন, ‘প্রতিমা তৈরির পারিশ্রমিক ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। অনেকে কম খরচে অর্ডার দিয়েছেন। পারিশ্রমিক বাড়েনি, আগের মতোই বলা যায়। দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। পূজার সময়ও এগিয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।’

প্রতিমা সাজাতে বিক্রি হচ্ছে শাড়ি, মালা, মুকুটসহ নানা সামগ্রী। দেবী দুর্গার শাড়ি মানভেদে এক হাজার থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মালা ও ত্রিশূল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। প্রতিমার গায়ে পরানো হচ্ছে সিল্ক, ভেলভেট ও সাটিন কাপড়ের ঝলমলে পোশাক। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাবেচা। প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজানোর উপকরণ কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি প্রতিমার পোশাক ও শাড়ির দোকানে।

শাঁখারীবাজারের সাজঘর দোকানের মালিক বরুণ দত্ত বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আগের তুলনায় এবার দাম বেড়েছে। আগে কাপড়ের শাড়ি ব্যবহার করা হতো। এবার মাটির শাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই শাড়ি বেচাকেনা কম। তবে যারা আসছেন তারা মালা ও অন্যান্য সামগ্রী কিনছেন। এ দিক থেকে অন্যবারের তুলনায় বেশি।’

এবারও ২১টি মণ্ডপে পূজা হবে। পূজার নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি ও আনসারকে প্রতিবারের মতো এবারও চিঠি দেওয়া হয়েছে, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূজায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে তাঁতিবাজার পূজা কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার দে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘শারদীয় পূজা উৎসব আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সবাই যথাযথভাবে এই মহোৎসব পালন করবে। তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।’

পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পূজা কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা নিজেদের জায়গা থেকে স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা করছে। আমরা উপর মহলে পর্যাপ্ত ফোর্স চেয়ে চাহিদা পাঠাব। একই সঙ্গে চেকিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, প্রয়োজনে স্ক্যানার মেশিন ব্যবহার করা হবে।’

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

দুর্গাপূজা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর