রেমিট্যান্স রক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে প্রবাসী শ্রমিকদের ১৫ দাবি

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:০৮

বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। এসব সমস্যার সমাধানে সরকারের কাছে ১৫ দফা দাবি তুলে ধরে সরকারের কাছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েয়েছেন তারা।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) ইআরএফ মিলনায়তনে (ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের এসব দাবি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপের ব্যবসায়ী আবু সাঈদ রিয়াজ, তরুণ সঙ্ঘের চেয়ারম্যান ফজলুল হক, গ্রিস থেকে ওসমান গনি, লেখক ফয়সাল আহমেদ এবং সিঙ্গাপুর থেকে মাসবাউল ইসলাম। তারা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু তাদের পরিবারকে সহায়তা করেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, তারা দেশের বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নেও বড় অবদান রাখেন। গত অর্থবছরে তারা রেকর্ড ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের আমদানি ব্যয়ের প্রায় ৪৫ শতাংশ বহন করে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বক্তারা বলেন, ‘প্রবাসী ভাই-বোনেরা তাদের ঘাম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করেছেন, কিন্তু দেশে ফিরে আসার সময় যে অব্যাহত অবহেলা, হয়রানি এবং আমলাতান্ত্রিক বাধার মুখে পড়েন তা লজ্জাজনক।’
শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট নবায়ন, ডকুমেন্টেশন, মৃতদেহ প্রত্যাবাসন এবং সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ সহায়তা পাচ্ছেন না। তারা সতর্ক করেছেন, যদি এসব সমস্যা সমাধান না হয়, তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং জাতীয় অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে।
তাদের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে
বিদেশে প্রতিটি বাংলাদেশি দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টা জরুরি হটলাইন এবং হেল্পডেস্ক স্থাপন, প্রবাসী বিনিয়োগে ১০ বছরের করমুক্ত সুবিধা, দ্রুত পাসপোর্ট নবায়ন ও সার্টিফিকেট প্রদান, মৃত কর্মীদের মৃতদেহ প্রত্যাবাসনের সম্পূর্ণ খরচ বহন, দূতাবাস পরিষেবা থেকে রাজনৈতিক প্রভাব ও মধ্যস্থতাকারীদের নির্মূল, প্রতিটি জেলায় অভিবাসী পরিষেবা কেন্দ্র স্থাপন, রেমিট্যান্সে ন্যূনতম ৫ শতাংশ সরকারি প্রণোদনা প্রদান, প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষার জন্য বিশেষ পুলিশ ইউনিট তৈরি, প্রবাসী পরিবারের জন্য ব্যাপক স্বাস্থ্য বীমা, বিমানবন্দরে এনআরবিদের জন্য দ্রুত ইমিগ্রেশন কাউন্টার নিশ্চিত করা, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করা এবং প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসীদের অর্থনীতিতে পুনরায় একীভূত হতে সহজ মেয়াদী ঋণ প্রদান।
বক্তারা বলেন, প্রবাসীদের ঘরে ফিরার পরকার্যক্রমেও যে বাধা সৃষ্টি হয় তা অবিলম্বে দূর করতে হবে। তারা জোর দিয়ে বলেন, সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে এবং এটি জাতীয় অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রবাসী নেতারা সব স্তরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং দেশের নাগরিকদেরও সচেতন থাকার আহ্বান জানান। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার তাদের ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করবে।