Logo

রাজধানী

টিউশন ছাত্রীর প্রেমের বলি জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ

Icon

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৪

টিউশন ছাত্রীর প্রেমের বলি জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেনের খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা জানিয়েছেন, বর্ষা ও তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানের প্রেমের জেরে খুন হয়েছে জবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেন। তবে জুবায়েদের এ খুনের বিষয়ে ছাত্রী বর্ষা কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছেন পুলিশকে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বর্ষাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এসব তথ্য জানান।

ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রী বর্ষার সঙ্গে মাহির রহমানের ৯ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাহির রহমান বুরহান উদ্দিন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। আর বর্ষা পড়ে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে। পাশাপাশি বাড়িতে তাদের বেড়ে ওঠা ছোটবেলা থেকেই। তাদের মধ্যে ছিল দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক। চতুর্থ শ্রেণি থেকে একে অপরকে পছন্দ করত। কিন্তু সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন ঘটে। কিছুদিন আগে তাদের সম্পর্কের ভাঙন হয়। বর্ষা তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানকে জানায়, তিনি জুবায়েদকে পছন্দ করেন। এটা জানার পর রাগে ক্ষোভে জুবায়েদকে মাহির রহমান ও তার বন্ধু হত্যা করে।

ওসি বলেন, সম্প্রতি বর্ষা মাহিরকে জানায় যে সে জুবায়েদ হোসেনকে পছন্দ করে। কিন্তু জুবায়েদকে সে তার পছন্দের কথা এখনও জানায়নি। জুবায়েদের সঙ্গে বর্ষার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোনো মেসেজও পাওয়া যায়নি। কিন্তু বর্ষার কথার ভিত্তিতে রাগে ক্ষোভে বর্ষার বয়ফ্রেন্ড তার বন্ধুকে সঙ্গে করে জুবায়েদকে খুন করে।

এ সময় ওসিকে জুবায়েদের বন্ধুর সঙ্গে ছাত্রী বর্ষার পরিচয় কীভাবে হলো তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বর্ষার সঙ্গে জুবায়েদের বন্ধু সৈকতের পরিচয় হয় ফেসবুকে। এছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে তাদের কথা হতো না বা অন্য কোনো সম্পর্কও ছিল না। যেহেতু সৈকত জুবায়েদের বন্ধু ছিল, এজন্য জুবায়েদের মৃত্যুর খবর দিয়ে সৈকতকে মেসেজ করে বর্ষা।

ওসি বলেন, বর্ষার মধ্যে কোনো হতাশা বা কান্নার ছাপ পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো নার্ভাসনেসও দেখা যায়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ষাকে চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। আমরা আরও বিস্তর তদন্ত করব। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানানো হবে।

জুবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে জুবায়েদ হোসেন পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ১৫, নূরবক্স লেনে ‘রৌশান ভিলা’ নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন। এদিন বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তৃতীয় তলায় তিনি খুন হন। বাসার নিচতলার সিঁড়ি থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্ত পড়ে ছিল। তৃতীয় তলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তারা তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। রোববার রাত ১১টার দিকে ওই ছাত্রী বর্ষাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয়। এদিন রাত ১১টার সময় আরমানিটোলার নূরবক্স রোডের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ প্রটোকলে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এর আগে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে খুনের শিকার জুবায়েদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয় পুলিশ।

১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও হয়নি মামলা

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় টিউশনিতে গিয়ে জবি ছাত্রনেতা জুবায়েদ খুনের ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। রোববার রাত ১টা থেকে তার পরিবার মামলা করার চেষ্টা করলেও সকাল ৮টা ৩০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও জুবায়েদ খুনের মামলা হয়নি এখনও। গ্রেপ্তার হয়নি মাহির রহমান ও তার বন্ধু। তবে পুলিশ বলছে, অভিযান চলছে।

এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পেরোলেও বংশাল থানায় খুনের শিকার জুবায়েদের পরিবার মামলা করতে সফল হয়নি। বাদীপক্ষ জানায়, ওই ছাত্রী বর্ষা, তার বাবা-মা ও তার বয়ফ্রেন্ড মো. মাহির রহমান এবং বয়ফ্রেন্ডের বন্ধু মো. নাফিসকে উল্লেখ করে মামলা দিতে চাইলেও বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী জুবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, আমরা ওই ছাত্রী, তার বাবা-মাসহ ৫ জনের নামে মামলা দিতে চাইলে বংশাল থানার ওসি এতজনের নামে মামলা না দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, ওই মেয়ের বাবা-মায়ের নামে মামলা দিলে নাকি মামলা হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করতে চাই। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

জানা যায়, এ ঘটনায় মামলা করতে থানায় প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে উপস্থিত রয়েছেন নিহত জুবায়েদের বাবা, বড় ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। তবে এদিন রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নিহতের বাবা, বড় ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা মামলার প্রস্তুতি নিলেও থানায় ওসি না থাকায় বিলম্ব হয়। পরবর্তীতে ওসি আসলে মামলায় আসামি কমানোর পরামর্শ দেন।

মামলায় বিলম্বের বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, যে কয়েকজনের নামে মামলা দিতে চায়, নেব। তবে তাদের বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে।

জেএন/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হত্যা / খুন নিহত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর