Logo

রাজধানী

রিফাত-মিন্নির ঘটনার মতো ত্রিভুজ প্রেমের গেরাকলে বলি জবির জোবায়েদ

Icon

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৪৪

রিফাত-মিন্নির ঘটনার মতো ত্রিভুজ প্রেমের গেরাকলে বলি জবির জোবায়েদ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ভালোবাসা কখনও বাঁচায়, কখনও কাঁদায় আবার কখনও মেরেই ফেলে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন (২৫)-এর ক্ষেত্রে তৃতীয়টাই সত্য হলো। যাকে ভালোবেসেছিল, সেই বর্ষাই হয়ে উঠল মৃত্যুর সাক্ষী, বরং মৃত্যুর নিশ্চয়তা দানকারী। পুলিশ বলছে, ‘বর্ষা চাইলে হয়তো বাঁচাতে পারতো জোবায়েদকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একই পরিমণ্ডলে বর্ষা ও জোবায়েদের পরিচয়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। কিন্তু একই সময়ে বর্ষা জড়িয়ে পড়ে আরেক শিক্ষার্থী মাহির হোসেনের সঙ্গে। দুই তরুণের মধ্যেই বর্ষা সম্পর্ক বজায় রাখছিল বলে জানিয়েছে তদন্ত সূত্র। জোবায়েদের সঙ্গে দেখা করতো, আবার মাহিরের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিল।

একসময় দুই প্রেমিকই জানতে পারে বর্ষার দ্বিমুখী সম্পর্কের কথা। শুরু হয় টানাপোড়েন, সন্দেহ, ঝগড়া আর ঈর্ষা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ষার প্ররোচনায় মাহির ও তার বন্ধু আয়লানসহ তিনজন মিলে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বর্ষা মাহিরকে বলে, জোবায়েদকে না সরালে আমি তোমার কাছে ফিরতে পারবো না।

২৬ সেপ্টেম্বরের রাতে, বর্ষার কথায় ক্ষুব্ধ মাহির দেখা করতে যায় জোবায়েদের সঙ্গে। সেখানে শুরু হয় তর্কাতর্কি। একপর্যায়ে মাহির ও তার সহযোগীরা নতুন কেনা সুইচ গিয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে জোবায়েদকে।

পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, হামলার পরও তখনো বেঁচে ছিল জোবায়েদ। বাঁচার মরিয়া চেষ্টায় সে রক্তাক্ত অবস্থায় দোতলা থেকে দৌড়ে উঠে যায় তিনতলায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল বর্ষা। মুখোমুখি হতেই সে কাঁদো কণ্ঠে বলে—বর্ষা, আমাকে বাঁচাও। কিন্তু বর্ষার ঠাণ্ডা উত্তর, তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না। এ কথা বলেই সে ঘুরে চলে যায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষায়, বর্ষা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে যায়।

এরপর জোবায়েদ দরজায় কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খোলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ে তার নিথর দেহ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ঘটনাটি একেবারেই ত্রিভুজ প্রেমের জটিল পরিণতি। বর্ষা ছিল মূল পরিকল্পনাকারী। মাহির ও আয়লান তার কথাতেই হত্যায় অংশ নেয়। জোবায়েদ তখনো বাঁচার জন্য লড়ছিল, কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি, বলেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রেম, প্রতারণা ও প্রতিশোধের এক ভয়াবহ গল্প উঠে এসেছে। যেখানে শোনা যাচ্ছে, বরগুনার রিফাত-মিন্নির ঘটনার প্রতিধ্বনি।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি রিফাত শরীফ হত্যার মতোই এক নারীর দ্বিমুখী সম্পর্ক থেকে জন্ম নেওয়া ট্র্যাজেডি। পার্থক্য শুধু স্থান ও নামের। বর্ষা, মাহির আর জোবায়েদের গল্প যেন সেই পুরোনো মিন্নি-রিফাত-নয়ন বন্ডের ঘটনার আধুনিক প্রতিচ্ছবি।

এএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর