সহযোগীকে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ২

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৪

শেখ নুরু ও মোজাম্মেল মোল্লা
ছিনতাইয়ের টাকার লোভে সহযোগীর হাতে খুন হয়েছেন অটোরিকশা চালক জালাল শিকদার (৪৬)। হত্যার ১৫ দিন পর তার পরিচয় শনাক্তের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা জেলা। এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
বুধবার (২২ অক্টোবর) পিবিআই ঢাকা জেলার পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
পিবিআই জানায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে জালাল শিকদার তার ভাড়া বাসা কেরাণীগঞ্জের চরাইল এলাকা থেকে অটোরিকশা চালানো এবং ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হন। পরদিন সকাল থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের শুভাঢ্যা পূর্বপাড়ার একটি ডোবায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন টিম লাশটির পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহত জালালের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রাংগাবালী ইউনিয়নের পশ্চিমনেতা গ্রামে। তার পিতা নয়া মিয়া শিকদার, মাতা ফাতেমা বেগম। তিনি বর্তমানে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের চরাইল মসজিদগলি এলাকায় রমজানের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন।
ওই ঘটনায় নিহত জালালের স্ত্রী হনুফা বেগম দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং–৬৫, ধারা ৩০২/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি)। পরে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই ঢাকা জেলা।
তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জালালের সহযোগী শেখ নুরু (৫০) পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে অটোরিকশাটি আত্মসাৎ করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ২টার দিকে কদমতলী এলাকায় দেখা হয় তাদের। সারারাত ছিনতাইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হলে নুরু ‘জুসে ঘুমের ওষুধ’ মিশিয়ে জালালকে অচেতন করে শুভাঢ্যা এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে দেন। পরে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যান।
পরদিন ভোরে রায়েরবাগ এলাকায় মোজাম্মেল মোল্লা (৪৩) নামের এক ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকায় রিকশাটি বিক্রি করেন নুরু।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই ১১ অক্টোবর শাহ আলী এলাকা থেকে নুরু এবং কদমতলী থেকে মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করে। পরে মোজাম্মেলের হেফাজত থেকে নিহত জালালের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্ততারকৃত নুরু শেখের বাড়ি ভোলা জেলার সদরপুর উপজেলার চর চাঁদপুর ইউনিয়নের ওসমান মোল্লার ডাঙ্গী গ্রামে। তার পিতা মৃত শেখ স্কুটি মিয়া, মাতা নুরজাহান বেগম। বর্তমানে তিনি কেরাণীগঞ্জের সাবান ফ্যাক্টরির পাশে এলাহী মসজিদ সংলগ্ন রমজানের বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছিলেন।
অন্য আসামি মোজাম্মেল মোল্লা (৪৩)-এর বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের চিংগুরিয়া গ্রামে। তার পিতা কালু মোল্লা, মাতা রোকেয়া বেগম। তিনি বর্তমানে কদমতলী থানার মুজাহিদনগর এলাকায় নিউ ভিশন স্কুল সংলগ্ন টিনশেড বাসায় ভাড়াটিয়া ছিলেন।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তারের পর দুই আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলাটি পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল এবং পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা পিপিএম (সেবা)–এর তত্ত্বাবধানে তদন্ত করা হয়েছে।
এমএএস/