ইসকনবিরোধী মিছিলকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫০
রাজধানীর উত্তরায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেওয়াকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দেওয়া এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রজনতা ও আলেম সমাজ। তারা প্রশাসনের ভেতরে ‘ঘাপটি মেরে থাকা ইসকনপন্থী চক্রের’ মুখোশ উন্মোচন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের মুগ্ধ মঞ্চে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
বক্তারা জানান, গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড় পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ১১ নম্বর সেক্টর চৌরাস্তায় পর্যন্ত ‘ইসকন কর্তৃক দেশব্যাপী উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ ও সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে’ সাধারণ ছাত্রজনতার ব্যানারে এক শান্তিপূর্ণ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী নামের এক মুসল্লি শুটিংয়ে ব্যবহৃত ডামি রাইফেল হাতে মিছিলে প্রবেশ করলে সেই ঘটনাকে ‘অজুহাত’ বানিয়ে তুরাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা মামলাকে বক্তারা ‘ফ্যাসিবাদী কায়দায় প্রশাসনের গভীর ষড়যন্ত্র ও হয়রানির নতুন রূপ’ বলে অভিহিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র সরদার রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহারে জানমালের ক্ষতি ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার নীলনকশা।’
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, “ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য আড়াল করতে একটি মহল ডামি রাইফেল হাতে মুসল্লির প্রবেশের ১৫-২০ সেকেন্ডের ভিডিওকে বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ছাত্রদের আগ্রাসন: উত্তরায় ধর্মীয় আন্দোলন’ শিরোনামে ভ্রান্ত বার্তা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।”
সরদার রিয়াদ বলেন, ‘ওই দিন মিছিলের সার্বিক নিরাপত্তায় উত্তরা বিভাগের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে পুলিশের ডিসি মহিদুল ইসলাম স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অথচ পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি উপর মহলের চাপেই মামলা নেওয়া হয় এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি জানানো হয়-
১. শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দেওয়ায় জড়িত ইসকনপন্থী দালালদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনা;
২. তুরাগ থানায় দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার;
৩. বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে জড়িতদের শনাক্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করা;
৪. ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রশাসনিক হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা।
বক্তারা বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ না নিলে স্থানীয় ছাত্রজনতা ও আলেম সমাজ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণায় বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাস্থ আলেম সমাজের প্রতিনিধি নিয়ামত উল্লাহ আমিন, তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নূর মোহাম্মদ, নাবিল মাহমুদ, ইকবাল হোসেন, নাহিদ ইসলামসহ জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা।
এমএএস/এমবি

