ভবন নির্মাণের বিধিমালা পরিবর্তন
নগরীর বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৯
রাজধানীর নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) পুনঃসংশোধন করে স্থানভেদে ভবনের উচ্চতা সীমা ও ইউনিট সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোসহ অপরিকল্পিত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সার্বিক জনস্বার্থ রক্ষায় জাতীয় কনভেনশন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে নাগরিক সমাজ। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে শহর পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত-সে বিষয়ে জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘কার স্বার্থে আবারও পরিবর্তন ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক, নগর-পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, নাগরিক ও গবেষকরা যৌথভাবে এ ঘোষণা দেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ২০২২ সালে গেজেট প্রকাশের পর, মাত্র তিন বছরের মধ্যে ব্যবসায়িক চাপের মুখে ২০২৩ সালে একবার এবং এখন আবার সংশোধন আনা হচ্ছে, যা নগর পরিকল্পনার চরম লঙ্ঘন এবং রাজধানীর বাসযোগ্যতার জন্য আত্মঘাতী।
তিনি বলেন, স¤প্রতি প্রস্তাবিত সংশোধনে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব এবং আবাসিক ইউনিট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী, পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক এবং নগরজীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি।
তিনি আরও বলেন, অনেক এলাকায় আগের তুলনায় দ্বিগুণ উচ্চতার ভবন নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে; ফলে ইতোমধ্যেই যানজট, পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বিপর্যয় এবং দূষণে জর্জরিত ঢাকায় আরও ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ ও নাগরিকদের মতামত উপেক্ষা করে আবাসন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর চাপেই ড্যাপ পুনঃসংশোধন করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজধানীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে। এছাড়া খসড়া ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৫-এ আজীবন অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট প্রদান ও বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবেরও সমালোচনা করেন বক্তারা। তারা বলেন, এতে ভবন নিরাপত্তা ও অগ্নি-ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে, যেখানে রাজধানী ঢাকা ইতোমধ্যেই ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ড্যাপ সংশোধনকে গোষ্ঠীস্বার্থ পূরণের উদ্যোগ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বক্তারা এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে স্থগিতের দাবি জানান। তারা বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া নগর পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। সংবিধান সংস্কার কমিটির সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমেদ ড্যাপ নিয়ে ১৭টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ঢাকার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে ও বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। ড্যাপের সংশোধনের মাধ্যমে যে প্রস্তাবগুলো আনা হয়েছে, তা উল্টো ঢাকার ওপর চাপ আরও বাড়াবে।
প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-ব্যবসায়িক স্বার্থগোষ্ঠীর অনৈতিক চাহিদা পূরণে ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ত্রুটিপূর্ণ পরিবর্তন প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করা; ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর), জনঘনত্ব ও নির্মিত পরিবেশ সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া; ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার যে কোনো সংশোধনে সব শ্রেণির নাগরিককে সম্পৃক্ত করা; কৃষিজমি, জলাভূমি ও বন্যা প্রবাহ এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা।
এছাড়া অভিজাত এলাকায় ফার কমানো, জলাভূমি ও কৃষিজমি রক্ষায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ, ভবনের উচ্চতার সীমা নির্ধারণ, সরু রাস্তায় বহুতল ভবন নির্মাণ নিষিদ্ধকরণ এবং ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের নীতিমালা কার্যকর করার প্রস্তাব দেন বক্তারা।
একইসঙ্গে আবাসন খাতে কালো টাকা বৈধকরণের উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে তারা বলেন, এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমীন, পরিবেশকর্মী ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য ইবনুল সাইদ রানা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান ও ডব্লিউ ভি বি ট্রাস্টেরর পরিচালক গাউস পিয়ারি।
আইএইচ/

