Logo

রাজধানী

‘অবসরে’ গেল পুলিশের ৩ কুকুর

কোরিকে ৫ লাখ ৬০ হাজারে বিক্রি

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১৬

‘অবসরে’ গেল পুলিশের ৩ কুকুর

বাম থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ক্যানাইন ইউনিটের কোরি, ফিন ও স্যাম। ছবি : সংগৃহীত

পুলিশ অফিসাররা অবসরে গেলে নানারকম ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন মাসিক পেনশন, এককালীন গ্র্যাচুইটি, অসুস্থ হলে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা, আরও অনেক কিছু।

কিন্তু পুলিশের কিছু বিশেষ সদস্যের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। তারা হলো- পুলিশের বিশেষায়িত ক্যানাইন ইউনিটের (কে-৯) কুকুর। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক বস্তু শনাক্ত করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এ ইউনিট।

এখানে কাজ করে ফিন, কোরি ও স্যাম নামের তিনটি কুকুর। ফিন ও কোরি ল্যাব্রাডর প্রজাতির। আর স্যাম জার্মান শেফার্ড। দীর্ঘ আট বছর ধরে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটে টানা কাজ করার পর তাদের এখন অবসরে পাঠানো হয়েছে।

তবে ‘অবসর’ বললে ভুল হবে; দীর্ঘ আট বছর বাংলাদেশ পুলিশকে সেবা দেওয়ার পর তাদের অবসর নিলাম করে বিক্রি করা হয়েছে।

গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্যানাইন টিমের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় প্রকাশ্য নিলাম। সেখানে তিন কুকুরই বিক্রি হয়েছে। ল্যাব্রাডর প্রজাতির ফিন বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকায়, জার্মান শেফার্ড স্যাম ৪০ হাজার টাকায়। আর কালো ল্যাব্রাডর কোরি বিক্রি হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ফিন ও স্যামকে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু কোরিকে কিনতে নিলামকারীরা প্রতিযোগিতা করলেও যিনি ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম তুলেছিলেন— তিনি শেষ পর্যন্ত কোরি নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তার কারণ ছিল বেশ অদ্ভুত।

কালো ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুর বাজারে অত্যন্ত মূল্যবান। এ প্রজাতির প্রতিটি বাচ্চার দামই অনেক। কোরি কালো ল্যাব্রাডর এবং স্ত্রী-লিঙ্গের কুকুর। তাই তাকে এত দামে কিনতে নিলামে মানুষের আগ্রহ ছিল মূলত প্রজননের জন্য। কিন্তু কেনার পর জানা গেছে কোরির বয়স হয়ে গেছে।

২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে জন্ম কোরি। সেখান থেকে বাংলাদেশে এনে ক্যানাইন ইউনিটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এখন তার বয়স আট বছর। এ বয়সে স্ত্রী কুকুর সাধারণত প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

কেন এসব ক্যানাইন কুকুরকে বিক্রি করা হয়? কেন কাউকে দত্তক দেওয়া হয় না? কিংবা সরকার কেন এদের দায়িত্ব নেয় না? পোল্যান্ড বা ইংল্যান্ডের মতো কোনো পেনশন ব্যবস্থা চালু করে না? এমন প্রশ্ন করা হয় ক্যানাইন ইনস্পেক্টর ফখরুল আলমকে।

জবাবে তিনি বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত কুকুরদের দায়িত্ব আমাদের কর্তৃপক্ষ নেবে বা এদের কোনো পেনশন সিস্টেম থাকবে। এটা চিন্তা করাই অযৌক্তিক এবং কাল্পনিক। আমাদের তেমন লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। হ্যান্ডলাররা চাইলেও দত্তক নিতে পারবে না। আমি নিজে হ্যান্ডলিং করেছি অনেক ক্যানাইন কুকুর। অনেক কুকুরের প্রতিই আমার মায়া জন্মেছে। কিন্তু দত্তক নেওয়ার কোনো পদ্ধতি নেই আমাদের নিয়মে। হ্যান্ডলার ছাড়াও কুকুর পালে বা কুকুর ভালোবাসে— এমন কাউকেও দত্তক দিয়ে দেওয়ার নিয়ম নেই। সবসময়ই বিক্রি করা হয়েছে ক্যানাইন কুকুর।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কোনো হ্যান্ডলারকে যদি বলেন ক্যানাইন দত্তক নিতে— তখন ‘কবি এখানে নীরব’। অর্থাৎ হ্যান্ডলাররা নিজেরাও চাইবেন না দত্তক নিতে। কারণ এগুলো সব বিদেশি কুকুর। এদের যত্ন করা, খাবার দেওয়া, চিকিৎসা করাতে যে খরচ হয় প্রতি মাসে— তা অনেক হ্যান্ডলারের মাসিক বেতনের চেয়েও বেশি। কে নেবে এই দায়িত্ব?

এসব কারণেই অবসরপ্রাপ্ত কুকুরদের নিলামে তোলাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত সমাধান বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ পুলিশ ডিএমপি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর