রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্য প্রতিদিন নতুন রূপ ধারণ করেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পরিবহনে চাঁদাবাজি, রুট পারমিট বাণিজ্য, অদক্ষ চালক ও কন্ডাক্টরদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ-সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা গভীর সংকটের মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দুর্বল তদারকি এই নৈরাজ্যকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
দৈনিক বাংলাদেশের খবরের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের নিত্য ভোগান্তি বাড়ছে। ঢাকার সড়কে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসে সরকারি নির্ধারিত ভাড়া মানা হয় না। তেলের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্ত্বেও মালিক সমিতির নির্দেশে বিভিন্ন রুটে ইচ্ছেমতো ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া তালিকা প্রদর্শন না করেই সহকারী ও কন্ডাক্টররা বাড়তি টাকা নেয়। বিশেষ করে অফিস সময় বা সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাড়া আরও বাড়ানো হয়, যা যাত্রীদের জন্য অমানবিক চাপ তৈরি করছে।
রাজধানীর পরিবহনে চাঁদাবাজি যেন রীতিমতো শিল্পে পরিণত হয়েছে। মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অসংগঠিত গোষ্ঠী প্রতিদিন বাসপ্রতি আদায় করছে ‘লাইন ফি’, ‘স্ট্যান্ড ফি’ ও নাম-না-জানা নানা চাঁদা। রুট পারমিট নবায়ন ও পরিচালনায়ও অতিরিক্ত অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
গাউছিয়া-গুলিস্তান রুটের কয়েকজন বাস মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে জানান, প্রতিদিনের চাঁদা পরিশোধ করে বৈধ ভাড়ার মধ্যে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে তারা বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেন। অপরদিকে চালক ও কন্ডাক্টররা যাত্রীদের ওপর ক্ষোভ উগরে দেন, যা সৃষ্টি করে বিরূপ আচরণের পরিবেশ।
বাস মালিকরা আরো জানান, ঢাকার গণপরিবহন খাতের অন্যতম বড় অনিয়ম হচ্ছে রুট পারমিট ব্যবস্থায় দুর্নীতি। নির্দিষ্ট রুটে অনুমোদনের চেয়ে বহুগুণ বেশি বাস নামানো হচ্ছে। এতে রাস্তায় দেখা যায় অযৌক্তিক প্রতিযোগিতা- একটি বাস আরেকটিকে ওভারটেক করতে গতি বাড়ায়, হঠাৎ থামে, হুটহাট যাত্রী তোলে।
ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে, ট্রাফিক জ্যাম তীব্র হয়, আর যাত্রীদের যাতায়াতের অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে দুঃসহ। ঢাকার পরিবহন খাতে দক্ষ চালকের ঘাটতি রয়েছে। অনেক চালকের সঠিক লাইসেন্স নেই বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক চালক লাইসেন্স নবায়ন না করেই গাড়ি চালাচ্ছেন। এদের অনেকেই অদক্ষ এবং ট্রাফিক আইনের প্রাথমিক ধারণাও জানেন না। অধিকাংশ মালিক স্বল্প বেতনে অদক্ষ চালক নিয়োগ দেন, যারা দিনের শেষে নির্দিষ্ট ‘টার্গেট’ পূরণ করতে গাড়ি দ্রুত ও বেপরোয়া চালাতে বাধ্য হন। এর ফলে দুর্ঘটনা প্রতিদিনের নিয়মিত সংবাদে পরিণত হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘গণপরিবহন ব্যবস্থায় বড় সমস্যা হচ্ছে কন্ডাক্টর ও সহকারীদের আচরণ। তারা প্রায়ই অশোভন ভাষায় কথা বলেন, ভাড়া নিয়ে তর্ক করেন এবং অনেক গণপরিবহনে নৈরাজ্য
ক্ষেত্রে নারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।’ পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগে কোনো মানদণ্ড নেই, প্রশিক্ষণ নেই, আচরণবিধি নেই। তাই এসব কর্মীর আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না।
ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আবু সাঈদ ও মুখলেসুর রহমান বলেন, (বিআরটিএ) পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণের মূল সংস্থা হলেও জনবল সংকট, দুর্নীতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। ফিটনেসবিহীন হাজার হাজার যানবাহন শহরে চলাচল করছে, অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে।
অনেক চালক নিয়মবহির্ভূতভাবে লাইসেন্স পেয়ে যান, যা জননিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করে। রাজধানীর ইত্তেফাক মোড় ও পল্টন মোড়ে দায়িত্বরত দুজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বাংলাদেশের খবরকে জানান, ট্রাফিক পুলিশের আদেশ অমান্য ও আইনশৃঙ্খলার প্রতি সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা দেখায় বাসচালক ও রিকশাওয়ালা। চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন মানার প্রবণতা অত্যন্ত কম। সিগন্যাল অমান্য, নিঢম ভেঙে গাড়ি চালানো, উল্টোপথে আসা, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো, এসব কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত রাজধানীর সড়কে দেখা যায়।
এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টরা আইন প্রয়োগ করতে গেলেই চালকরা তর্কে জড়ান এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়। ফলে আইন কার্যকর থাকে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরও দেখা যায় যে, ঢাকা শহরে গাড়ি পার্কিংয়ে চরম অব্যবস্থা রয়েছে। ফুটপাত, সড়কের মোড়, মার্কেটের সামনে- সব জায়গায় বেপরোয়া পার্কিং করা হয়। এতে রাস্তা সরু হয়ে যানজট তীব্রতর হয়। প্রতিদিন অফিস সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পার্কিংজনিত জটিলতা স্পষ্ট দেখা যায়। পথচারীরা ফুটপাতে হাঁটতে না পেরে সড়কে নামতে বাধ্য হন, যা ঝুঁকি বাড়ায়।
ঢাকা কলেজের সায়েম হোসেন ও নটর ডেম কলেজের এমদাদুল হক জানান, গণপরিবহনের নৈরাজ্য শুধু যাত্রীদের ভোগান্তিই বাড়াচ্ছে না, ধ্বংস করছে শহরের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতাও। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ যানজটে আটকে থাকে। পরিবহন খাতে অনিয়ম দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সংবাদকর্মী আনোয়ার হোসেন ও রাজধানী সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী বাদল খান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা করে তুলতে হবে। এই অঙ্গীকারের প্রথম ধাপ হিসেবে রাস্তা থেকে লক্কড়-ঝক্কড় সব বাস উচ্ছেদ করতে হবে। ভুক্তভোগী নগরবাসী দীর্ঘ সময় ধরে অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন। রাজধানীর যাত্রীরা বাস মালিক শ্রমিকদের ইচ্ছের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ তাদের মর্যাদা নিয়ে এসব পরিবহনে যাতায়াত করতে পারছেন না। সরকার সব সময় বাস মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থগুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নেয় না।
রাজধানীর ফার্মগেট, গ্রীন রোড, মিরপুর ও নাখালপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, গণপরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মালিক সমিতির শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হলেও সেখানে কোনো যাত্রী প্রতিনিধি রাখা হয় না। ইজিবাইক, অটোভ্যান, মোটরসাইকেল এখন দেশের প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন এখন স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। তাই অতি দ্রুত সব সড়ক থেকে লক্কড়-ঝক্কড় বাস উচ্ছেদ করে নতুন উন্নতমানের বাস নামাতে হবে। তাহলে বাস ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া ব্যবসা কমে যাবে।’
গত দুদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখা যায়, সিএনজি অটোরিকশা সেক্টরে স্বেচ্ছাচারিতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। সিএনজি অটোরিকশা চলছে আগের মতোই মিটার ও লাইটবিহীন। চালকরা ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকছেন। যাত্রীদের ইচ্ছা মতো যাওয়া তো দূরের কথা। চালকদের কড়া জবাব-গেলে যাবেন না গেলে নাই। অথচ সিএনজি অটোরিকশার কমার্শিয়াল রেজিস্ট্রেশনের প্রধান শর্ত ছিল, যাত্রীরা যেখানে যেতে চাইবেন সেখানে যেতে চালক বাধ্য।
সিএনজি অটোরিকশা চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সিএনজি অটোরিকশা সেক্টরে যে নৈরাজ্য বিরাজ করছে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কোনোভাবেই দূর করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে আওয়ামী আমলের মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে এই সেক্টরে কোনো দিন শৃঙ্খলা ফিরবে না।
এদিকে খিলগাঁও, বাসাবো ও চানখাঁরপুলের কয়েকজন সিএনজি চালক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মালিকরা এখনো চালকদের কাছে থেকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ জমার টাকা আদায় করছেন। এর সাথে ১০০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে গ্যারেজ ভাড়া বাবদ। এতে করে চালকরা নিরুপায় হয়েই বেশি ভাড়া হাঁকছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, মালিকদের কাছে জিম্মি চালকরা আর চালকরা জিম্মি করছে যাত্রীদের।
রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস না থাকায় যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এই সুযোগে যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশার চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমনটাই দাঁড়িয়েছে যে, ঢাকায় এখন সিএনজি অটোরিকশার চেয়ে উবারের ভাড়া তুলনামূলক কম। যারা উবার, পাঠাও ব্যবহার করতে জানেন না, তারা বাধ্য হয়েই গলা কাটা ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে চড়েন।
এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ৪০ হাজার সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে ৩০ হাজারই অবৈধ। এর মধ্যে ৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশার মালিক ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টরা। বাকিগুলো সব ঢাকার আশপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ অন্যান্য জেলার। রাজধানীতে চলাচলের জন্য ১৫ হাজার অটোরিকশার কোনো রুটপারমিট নেই। ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দিয়ে ১০ বছর ধরে এগুলো চলে আসছে। প্রতিটি অটোরিকশার জন্য মাসে ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা আছে। গড়ে মাসে ৬ হাজার টাকা করে ধরলে প্রতিমাসে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে প্রাইভেট অটোরিকশার নামে যাত্রী পরিবহন করছে আরও ৪ হাজার ২শ অটোরিকশা। এগুলো থেকেও মাসে চাঁদা তোলা হচ্ছে এক কোটি টাকার বেশি।
কয়েক বছর আগে হাইকোর্ট এসব প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশাকে ছয় মাস চলাচলের অনুমতি দিয়ে একটি আদেশ জারি করেছিলেন। সেই আদেশ বার বার বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। কার্যত এসব সাদা অটোরিকশার আয়ুষ্কাল বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে।
অবৈধভাবে চলাচলকারী ৩০ হাজার অটোরিকশা রাজধানীতে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বৈধ অটোরিকশার চালক ও মালিকরা তাদের কাক্সিক্ষত যাত্রী ও ভাড়া পাচ্ছে না। আলাপকালে বৈধ সিএনজি অটোরিকশার কয়েকজন চালক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই পারবে এসব অবৈধ অটোরিকশা বন্ধ করতে। বৈধ আর অবৈধ মিলে এসব অটোরিকশা ২০ বছর ধরে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা খাতে নৈরাজ্য বন্ধের জন্য দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্ত সরকার গুরুত্ব দেয়নি। অবৈধভাবে চলাচলের জন্য মাস শেষে বিশাল অঙ্কের টাকার ভাগ একদম উপরমহল পর্যন্ত যেতো বলে হয়তো কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। তবে বর্তমান সরকার চাইলে এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সিএনজি অটোরিকশা খাতে নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। ২-৩ মাসে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ রাজধানীর বেশির ভাগ সিএনজি অটোরিকশায় মিটার নেই। আবার থাকলেও সেগুলো টেম্পারিং করা। এগুলো পুনঃস্থাপন করতে তিন মাস সময় লাগবে। এ ছাড়া মালিকরা সরকার নির্ধারিত জমার টাকার চেয়ে অনেক বেশি আদায় করেন। মালিকপক্ষকে নির্ধারিত জমা নিতে বাধ্য করাতে না পারলে চালকরা দিনশেষে খালি হাতে ঘরে ফিরবেন। পরের দিন তারা আর গাড়ি চালাতে চাইবেন না।
রাজধানীর শনির আখড়ার সিএনজি চালক মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘মালিকপক্ষ প্রতিদিন ৯০০ টাকা জমা নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা ১২শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা নিচ্ছে। তারা অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ না করলে মিটারে চলে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না।’
এদিকে, ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী গাজীপুরের কাপাসিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলা সদর, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, হোসেনপুর, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলাসহ আশপাশের লাখ লাখ মানুষ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। সব পরিবহন কোম্পানি যাত্রীদের কাছ থেকে গেটলক সার্ভিসের ভাড়া আদায় করলেও বাসগুলোতে সেবা মেলে লোকাল সার্ভিসের। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের অনেক সময় মারধরের শিকার হতে হয়।
স্থানীয়রা বাংলাদেশের খবরকে জানান, এক সময় ‘ঢাকা পরিবহন’, ‘প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন’ ও ‘ভাওয়াল পরিবহনে’র শতাধিক বাস কাপাসিয়া সদর থেকে ঢাকা গেলেও বর্তমানে কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজধানী কিংবা গাজীপুর সদরের উদ্দেশে কোনো বাসই যাত্রা শুরু করে না। ফলে যাত্রার শুরুতে সিট মেলে না এখানকার অধিকাংশ যাত্রীর। এমনকি লোকাল সার্ভিসের মতো সেবাদাতা দুটি পরিবহনের বাস ছাড়া অন্য বাসগুলোকে কাপাসিয়া সদরে এবং আশপাশের অধিকাংশ স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করতে দেওয়া হয় না। ফলে ওই নির্দিষ্ট পরিবহনের বাসের যাত্রীরা তাদের ব্যাগ ও ছোটখাটো জিনিস নিয়ে উঠতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়কে চলাচলরত সাতটি কোম্পানির বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া লেখা থাকে। তদুপরি টিকিটের গায়ে আবারও নতুন করে সিল মেরে গড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৫ টাকা কি.মি হারে ভাড়া আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে তারা নিজেদের মতো করে একটি ভাড়ার তালিকা করে রেখে দেয়। সাধারণ যাত্রীরা তালিকা দেখতে চাইলে তা দেখিয়ে অনেকটা জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়।
এদিকে গতকাল সকালে সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কিছু রুটে কাউন্টার ও টিকিট সিস্টেম চালু করায় সড়কে কিছু কোম্পানির বাস চলছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। সব থেকে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা-রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। এসব রুটে বিআরটিসি বাস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
গতকাল সকালে দেখা যায়, এসব রুটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না অনেকে। সব থেকে বেশি ভোগান্তি নারী যাত্রীদের। বাসে উঠতে না পেরে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। যাদের সামর্থ আছে তারা রিকশা, সিএনজি, রাইড শেয়ারে গন্তব্যে ছুটছেন।

