Logo

কর্পোরেট

টেকসই কৃষি অর্থায়নে নতুন দিগন্ত: ৮,৫০০ কৃষক পরিবারের ক্ষমতায়নে ব্র্যাক ব্যাংক

Icon

বিজনেস ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৮

টেকসই কৃষি অর্থায়নে নতুন দিগন্ত: ৮,৫০০ কৃষক পরিবারের ক্ষমতায়নে ব্র্যাক ব্যাংক

বাংলাদেশে কৃষি অর্থায়নের ধারায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। গত দুই বছরে ৮,৫০০-এরও বেশি কৃষক পরিবারের মাঝে মোট ৫৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।

এ উদ্যোগের আওতায় প্রায় ৩৫,০০০ গ্রামীণ মানুষের জীবন ও জীবিকা সরাসরি উপকৃত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে প্রান্তিক ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই উদ্যোগ দৃশ্যমান প্রভাব ফেলেছে।

এসএমই-কেন্দ্রিক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ব্র্যাক ব্যাংক আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে থাকা প্রান্তিক ও ছোট কৃষকদের প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। ব্যাংকটির ডিজিটাল কৃষিঋণ প্ল্যাটফর্ম ‘সুবিধা’র মাধ্যমে কৃষকরা মাত্র ২০ মিনিটেই ঋণসুবিধা পাচ্ছেন। শাখায় না গিয়ে নামমাত্র কাগজপত্রের মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়ায় তাঁদের জীবিকা ও আয় উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

এই ফিনটেক-কেন্দ্রিক মডেলটি শুধু অর্থায়ন নয়, প্রযুক্তি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতেও সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিতে নীরবে অবদান রাখা কৃষকদের জন্য এটি আত্মবিশ্বাস ও আর্থিক সক্ষমতার নতুন দুয়ার খুলেছে।

আরও বিস্তৃত পরিসরে কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে ব্র্যাক ব্যাংক সিনজেনটা, আইফার্মার, পেট্রোকেম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অ্যাগ্রিটেক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ডিজিটাল টুল, বাজার সংযোগ এবং উন্নত কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হয়েছে।

যৌথভাবে ব্যাংকটি ২২টি জেলার ৩,২৫৬ জন কৃষকের মাঝে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যেখানে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই ঋণ গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ ও হলুদ চাষসহ নানা কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

এ ছাড়া আরও ১,৮৪৪ জন কৃষক ৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋণসুবিধা পেয়েছেন, যা ফসল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২৫১ জন কৃষককে ভুট্টা, পেঁয়াজ, আলু ও ধান চাষে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা অর্থায়ন দেওয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ জেলা গাইবান্ধায় ৭০ জন গবাদিপশু খামারিকে পরীক্ষামূলকভাবে ৫১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরার মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১৩৪ জন কৃষক জলবায়ু-সহনশীল কৃষি অর্থায়ন সুবিধা পেয়েছেন।

গবাদিপশু ও দুগ্ধ খাতেও গতি এসেছে। ৫৫২ জন কৃষকের মাঝে ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে কৃষক সমবায় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

প্রকল্পের প্রভাবে ধান চাষে ২,৪১৩টি, গরু মোটাতাজাকরণে ১,৭১১টি, ভুট্টা চাষে ১,১১২টি, আলু চাষে ৮৫১টি, দুগ্ধ খাতে ৮৪০টি, পেঁয়াজ চাষে ৬৮৯টি, হলুদ চাষে ২১২টি, বাদাম উৎপাদনে ১৮৩টি, সয়াবিনে ১৬২টি, দারিদ্র্য বিমোচনে ১১২টি, মরিচ চাষে ৭৪টি এবং রসুনে ৫৩টি ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিতরণকৃত ৮,৪১০টি কৃষিঋণ দেশের কৃষকের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে।

এই ঋণগুলো শুধুই সংখ্যার গল্প নয়, প্রতিটি ঋণের পেছনে রয়েছে সংগ্রাম, সাফল্য ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

সাতক্ষীরার আমাদির ৩৬ বছর বয়সী কৃষক স্বপ্না পারভিন ৫১ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে ছোট পরিসরে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। ছয় মাসে ঋণ শোধ করে ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি আরও দুজন নারীর কর্মসংস্থান তৈরি করেন। স্বপ্না বলেন, ‘এখন আমাকে আমার এলাকায় লিডার হিসেবে দেখছে সবাই। আমি বছরজুড়েই আয় করছি, সিজনাল কাজের ওপর আর নির্ভর করতে হয় না।’

রংপুরের মো. নাজমুল ইসলাম উন্নত বীজ ও সেচ ব্যবস্থার কারণে এক মৌসুমেই ফলন দ্বিগুণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঋণের কিছু অংশ শোধ করেছি, পানি তোলার মেশিন কিনেছি, মেয়েকেও কলেজে ভর্তি করিয়েছি। ব্র্যাক ব্যাংক আমাকে আত্মমর্যাদা ও ভবিষ্যৎ দিয়েছে।’ তিনি এখন দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন।

ব্র্যাক ব্যাংক বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক রিস্ক স্কোরিং ও রিয়েল-টাইম ডিসিশন টুল নিয়ে কাজ করছে। এটি চালু হলে কৃষকরা আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা পাবেন। লক্ষ্য হলো কৃষকদের অ্যাগ্রি-এন্টারপ্রাইজ গঠন, রপ্তানি মার্কেটে প্রবেশ ও ভ্যালু-চেইনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

এই কৃষি অর্থায়নের উদ্যোগ এসেছে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের ‘ব্যাংকিং দ্য আনব্যাংকড’ দর্শন থেকে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় এই মডেল কৃষকদের জন্য টেকসইতা, ক্ষমতায়ন ও সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

এমডিএ/এইচআর

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ব্র্যাক ব্যাংক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর