বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য দেশের প্রথম ডেন্টাল ইউনিট চালু
বিজনেস ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৩৯
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি দেশের প্রথম বিশেষায়িত ডেন্টাল ইউনিট যাত্রা শুরু করেছে রাজধানী ঢাকায়, যেটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
ফেইথ বাংলাদেশের লালমাটিয়া ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে এ ইউনিটটি উদ্বোধন করা হয়, যেখানে অংশ নেন অতিথি, বিশেষ শিশুদের জন্য এ প্রতিষ্ঠান-পরিচালিত স্কুলের শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং ফেইথ বাংলাদেশ পরিবারের সদস্যরা।
নতুন ডেন্টাল ইউনিটটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য নিরাপদ, শিশু-সংবেদনশীল ও বিশেষায়িত দন্তচিকিৎসা প্রদান করছে। এটিকে নিয়মিত ও উন্নত দন্তচিকিৎসা প্রদানের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রয়োজনে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়, যা প্রচলিত ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে সাধারণত থাকে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক ড. মো. শাহাদাত হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম।
অন্যান্যের মধ্যে ফেইথ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক নীলুফার আহমেদ করিম ও বোর্ড সদস্য ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ফেইথ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউটের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব শাহজাহান আলী মোল্লা এবং খ্যাতিমান ডেন্টাল সার্জন ডা. রেজাউল আহসান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ডেন্টাল ইউনিটের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে শিশুদের জন্য একটি প্রতিরোধমূলক ডেন্টাল কেয়ার সেমিনার এবং ডেন্টাল স্ক্রিনিং প্রোগ্রামও আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এখনও উপক্ষিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
প্রধান অতিথি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা প্রায়শই সমাজ এবং এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও দুর্ব্যবহার এবং নিষ্ঠুরতার সম্মুখীন হয়। তিনি বলেন, “আমাদের সকলের উচিত এই শিশুদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা এবং তাদেরকে জাতীয় সম্পদে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালানো।”
দেশে ১৬-১৮ লাখ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের সকলের জন্য বিশেষায়িত দন্তচিকিৎসা নিশ্চিত করা উচিত এবং ধনী ব্যক্তিদের এই লক্ষ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
বিশেষ অতিথি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।
ফেইথ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক নীলুফার আহমেদ করিম বলেন, সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে তাদের প্রতিষ্ঠানের যে প্রতিশ্রুতি, তারই প্রতিফল এই ডেন্টাল ইউনিট।
তিনি বলেন, “বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের চিকিৎসা কেবল চিকিৎসা নয়, এটি এক আবেগের যাত্রা। একটি পরিবারের দুশ্চিন্তা, একটি শিশুর অস্বস্তি এবং নিরাপত্তা ও ভালোবাসার সেই অদৃশ্য চাহিদা, সবকিছু মিলেই এটি এক গভীর মানবিক দায়িত্ব।”
নীলুফার আহমেদ করিম উল্লেখ করেন যে, এই বিশেষায়িত ইউনিটের ধারণাটি এমন পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে, যারা তাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ, সহানুভূতিশীল দন্তচিকিৎসা পরিবেশ খুঁজে পেতে সংগ্রাম করেছিল। তিনি বলেন, "এই ইউনিটটি ভালোবাসা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। আজকের প্রতিশ্রুতি হলো আমাদের শিশুদের ব্যথা আর উপেক্ষিত হবে না। তাদের চিকিৎসা হবে নিরাপদ, স্বচ্ছন্দ ও সহমর্মিতাপূর্ণ পরিবেশে।”
ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, সমাজের কাছ থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সহানুভূতি নয়, সমানুভূতি প্রাপ্য যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
ডেন্টাল ইউনিট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফেইথ বাংলাদেশ ঘোষণা করে যে তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আরও দুটি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা চালু করতে যাচ্ছে। সেবা দুটি হলো নিবেদিত চক্ষু সেবা এবং অ্যাজমা সেন্টার।
অভিভাবক, সেবাপ্রদানকারী, শিক্ষক ও স্বাস্থ্য পেশাদাররা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

