Logo

কর্পোরেট

সি. বি. জামান

পুরস্কার না পাওয়া এক পুরস্কৃত জীবনের গল্প

Icon

বিজনেস ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৩৫

পুরস্কার না পাওয়া এক পুরস্কৃত জীবনের গল্প

বিখ্যাত পরিচালক সি. বি. জামানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে তার ছেলে—পরিচালক, মার্কেটিং, ব্র্যান্ড, জনসংযোগ ও কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ সি. এফ. জামান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবাকে স্মরণ করে আবেগঘন একটি লেখা প্রকাশ করেছেন।

তিনি লেখেন—

২০ ডিসেম্বর ২০২৫—আব্বুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।

সি. বি. জামান—আমার আব্বু।

এই নামটা অনেকের কাছে একজন অভিনেতা, অনেকের কাছে একজন মডেল। কিন্তু আমার কাছে তিনি আজীবন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক—মনে-প্রাণে, বিশ্বাসে, অপেক্ষায়।

আব্বুর জন্ম আসামের গৌরীপুরে, রাজপ্রাসাদে—যেখানে জন্মেছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়াও। কাকতাল না কি নিয়তির ইশারা জানি না, তবে আব্বুর জীবনটা যেন শুরু থেকেই সিনেমার সঙ্গে বাঁধা ছিল।

এমসি কলেজে পড়ার সময় উর্দু শেখা, লাহোরে গিয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করা, জহির রায়হান ও খান আতাউর রহমানের সঙ্গে পথচলা—সবকিছুই যেন ছিল প্রস্তুতির অধ্যায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রস্তুতি ছাড়া তাড়াহুড়া শিল্পকে ছোট করে। তাই পাকিস্তান আমলেই সুযোগ থাকলেও তিনি তখনই পরিচালক হননি।

স্বাধীনতার পর ‘ঝড়ের পাখি’ দিয়ে তার পরিচালনা জীবন শুরু। এটিকে যদি এ দেশের প্রথম সাসপেন্স ড্রামা বলা হয়, তবে ভুল হবে না বোধহয়। এরপর ‘উজান ভাটি’, ‘পুরস্কার’, ‘হাসি’, ‘লাল গোলাপ’, ‘কুসুম কলি’—একটির পর একটি সামাজিক গল্প, সুস্থ বিনোদন আর নীরব দক্ষতার পরিচয়।

এছাড়া খান আতার সঙ্গে ‘প্রমোদকার’ ছদ্মনামে নির্মিত ‘ত্রিরত্ন’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘সুজনসখী’ ও ‘হিসাব-নিকাশ’—সবগুলোই আজ কাল্ট ক্ল্যাসিক।

এর মধ্যে ‘পুরস্কার’ চলচ্চিত্রটি ছয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে এবং আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত হয়। অথচ পরিচালক হিসেবে আব্বু নিজে কখনোই সেই পুরস্কার পাননি। বলা হয়েছিল—‘ইয়াং আছেন, সামনে পাবেন।’ কিন্তু সেই ‘সামনে’ আর কোনোদিন আসেনি।

এই ইন্ডাস্ট্রিতে ৬৩ বছর কাটিয়েও তিনি কখনো আজীবন সম্মাননা পাননি। হয়তো তিনি চাইতেনও না। আব্বু এমনই ছিলেন; নেননি, শুধু দিয়ে গেছেন।

প্রায় ৩০ বছর পর আবার পরিচালনায় ফিরতে চেয়েছিলেন। ছবির নাম ছিল ‘এডভোকেট সুরজ’। শুটিং শুরুর আগেই শুধু প্রচারণাতেই যে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল, তা ইতিহাস। কিন্তু নিয়তি অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, এরপর শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।

অনেকে বলেন, জহির রায়হান আর খান আতাউর রহমানের পাশে আব্বুর নাম খুব কমই আসে। আমি বলি, অবশ্যই আসা উচিত। যোগ্যতায়, চিন্তায় ও কাজে তিনি তাদের সমকক্ষ ছিলেন।

একজন আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘তোমার আব্বুর দশ ভাগের এক ভাগ পেলেও তুমি অনেক দূর যাবে।’

আমি জানি, আমি পুরো দশ ভাগই পেয়েছি।

কিন্তু যে স্বপ্নটা ছিল, নিজের সিনেমার প্রিমিয়ারে আব্বুকে পাশে বসিয়ে রাখা, সেটা আর হবে না। এটাই আমার কষ্ট, এটাই আমার শূন্যতা।

আজ শুধু বলি—

আব্বু, আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন

আপনার কাজের মধ্যেই,

আপনার নীরবতার মধ্যেই,

আপনার দেওয়া আলোর মধ্যেই।

আপনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

ভালো থাকবেন ওপারে, পরিচালক সাহেব।- সংবাদ বিজ্ঞপ্তি 

এমডিএ/ টিএইচএম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর