
ছবি : বাংলাদেশের খবর
আগামী ৭ এপ্রিল থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে মধু আহরণের মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এবং পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকাগুলোতে মৌয়ালরা ইতোমধ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। তবে বনদস্যুদের নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কায় এবার মৌয়ালদের আগ্রহ কমে গেছে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে শরণখোলা ও চাঁদপাই থেকে তিন শতাধিক এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে আরও তিন শতাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে রওনা দেন। ৩ এপ্রিল থেকে বন বিভাগ মৌয়ালদের মধু আহরণের পাশ (অনুমতিপত্র) প্রদান শুরু করে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহ মৌসুম শুরু হলেও এবছর ঈদুল ফিতরের কারণে তা পিছিয়ে ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে। তবে এবছর মধু আহরণে মৌয়ালদের আগ্রহ কম। কারণ সুন্দরবনে নতুন করে বনদস্যুদের অস্তিত্বের খবরে অপহরণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা আগাম দাদনের টাকা না দেওয়ায় অনেক মৌয়াল মধু সংগ্রহে যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
শরণখোলার মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ, রিপন বয়াতী, মনিরুজ্জামান ও চাঁদপাইয়ের মো. কামাল হোসেন জানান, ২০১৮ সালে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হলেও সম্প্রতি কয়েকটি নতুন দস্যু বাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে জীবন ঝুঁকি নিয়ে বনে যাওয়া আবারও কঠিন হয়ে পড়ছে।
শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ২২টি নৌকা মধু আহরণের পাশ নিয়েছে। যা গত বছরের অর্ধেকেরও কম। চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশন থেকে ৩৫টি নৌকা ও ১৪০ জন মৌয়াল এবং চাঁদপাই স্টেশন থেকে ৮টি নৌকা ও ৫২ জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব বলেন, এ বছর শরণখোলা রেঞ্জে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫০ কুইন্টাল এবং মোম ১৬০ কুইন্টাল। বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য মতে, চলতি ২০২৫ মৌসুমে সরকারিভাবে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় হাজার কুইন্টাল এবং মোমের লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ কুইন্টাল। ১ এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনী ও কোবাদক স্টেশন থেকে ২০টি পাশ সংগ্রহ করেছেন মৌয়ালরা। এর মধ্যে সকালে ৩০টি নৌকা সুন্দরবনে প্রবেশ করে।
মৌয়াল ফজলুল হক বলেন, ঈদের পর আনন্দ নিয়ে মধু আহরণে বনে যাচ্ছি। তবে মধু চুরির কারণে জানি না আশানুরূপ মধু পাবো কি না। তাছাড়া যেসব অঞ্চল সংরক্ষিত (অভয়ারণ্য) সেখানে মধু আহরণের অনুমতি না থাকায় অনেক মধু নষ্ট হয়ে যায়।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, এবার ঈদের কারণে ১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে মৌসুম শুরু হয়নি। তবে সীমিত পরিসরে পাশ দেওয়া হয়েছে। মৌয়ালদের নিরাপত্তায় বন বিভাগের টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে মৌয়ালরা ১ হাজার ২৩ কুইন্টাল মধু এবং ৩০৬ দশমিক ৯০ কুইন্টাল মোম সংগ্রহ করেন। ২৯০টি পাশের মাধ্যমে ২ হাজর ৪৬ জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করে এসব সংগ্রহ করেন। পরবর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৬৪টি পাশের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৭০ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যান। তাদের সংগৃহীত মধুর পরিমাণ ১ হাজার ২৩৫ কুইন্টাল এবং মোম ৩৭০ দশমিক ৫০ কুইন্টাল। এবারও আশানুরূপ মধু ও মোম সংগ্রহ হবে বলে জানান তিনি।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব জানান, কোনো নৌকা দস্যুদের কবলে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে বনরক্ষীদের জানাতে বলা হয়েছে। মৌয়ালদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম কবির/এমবি