জলমহাল শুকিয়ে মাছ শিকার, সেচ শঙ্কায় কৃষক

হাওরাঞ্চল (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:০০

ছবি : বাংলাদেশের খবর
নেত্রকোনার মদনে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ উঠেছে ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এতে করে আশপাশের প্রায় ৩০ একর বোরো জমিতে দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রশাসন ও পুলিশকে বার বার জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মদন সদর ইউনিয়নের মদন গ্রামের পাশে ১৫ একর জমি নিয়ে গঠিত ‘বাইনবিল’ নামের একটি জলমহাল রয়েছে। সরকারিভাবে তিন বছরের জন্য জলমহালটি ইজারা নেয় হাওর বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। যার সভাপতি উলাদ মিয়া। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে জলমহালটি নিয়ন্ত্রণ করছেন মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাইনবিলের পানি ব্যবহার করে আশপাশের প্রায় ৩০ একর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ইজারাদাররা সেচ মেশিন দিয়ে বিলের পানি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে ফেলেছেন। এতে করে অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক পরিবার সেচ সংকটে পড়েছে এবং ফসলহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষক রহিছ উদ্দিন প্রশাসনের কাছে বার বার ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে তিনি সেচের পানির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।
স্থানীয় কৃষক রহিছ উদ্দিন জানান, জলমহালটি ইজারাদার উলাদ মিয়ার কাছ থেকে সাবলিজ নিয়েছেন মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির। গত ৯ মার্চ বিলের পানি শুকাতে সেচ মেশিন চালু করলে তিনি বিষয়টি মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসনানকে জানান। তার পরামর্শে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তাতেও ফল মেলেনি। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও অবগত করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০০৯ সালের জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ২২ নম্বর প্যারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, যেখানে জমি সেচের জন্য জলমহালের পানি ব্যবহার হয়, সেখানে সেচ মৌসুমে পানি সরবরাহ বিঘ্নিত করা যাবে না। কিন্তু এ নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বারবার বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় কৃষক আজিম উদ্দিন, সুলতানসহ একাধিক কৃষক জানান, প্রতি বছরই একইভাবে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হয়। এতে প্রতি মৌসুমেই সেচের পানি সংকট দেখা দেয়। আর খরার সময় তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির জানান, বিলের মালিক উলাদ মিয়া। রহিছ উদ্দিন মেম্বার উলাদ মিয়ার কাছে চাঁদা দাবি করছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তিনি এমন অভিযোগ করছেন। এছাড়াও বিলের পানি শুকিয়েছেন কৃষকরাই। আমার এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসনান জানান, বাইনবিল জলমহালের সেচ বিষয়ে রহিছ উদ্দিন মেম্বার যতবার আমাকে জানিয়েছেন, ততবারই আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। আমি নিজেও একাধিকবার সেখানে গিয়েছি। তারপরও যদি পুলিশকে দোষ দেন। কিছু বলার নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, এ বিষয়ে আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে রহিছ উদ্দিন মেম্বার আমাকে মোবাইলে অবগত করলে সঙ্গে সঙ্গেই লোক পাঠিয়ে সেচ বন্ধ করিয়েছি। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ওসিকেও অবগত করেছি।
নিজাম তালুকদার/এমবি