মুচলেকা দিয়েও বন্ধ হয়নি লটারি বাণিজ্য, চলছে অশ্লীল নৃত্য

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৫১
-67f51bc928f75.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় হস্ত ও কুটির শিল্প মেলার আড়ালে অবৈধ লটারি বাণিজ্য এবং রাতে যাদু দেখানোর নামে অশ্লীল নৃত্যের অভিযোগ উঠেছে।
প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দেওয়ার পরও থেমে নেই এই কার্যক্রম। বরং প্রতিদিন নতুন রূপে আরও বিস্তৃত হচ্ছে লটারির জাল।
পীরগঞ্জের ডায়াবেটিক হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় গত ১ এপ্রিল শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। মেলার নামে লটারির টিকিট বিক্রির জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ছুটছে ৪০-৫০টি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক।
মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে চলছে এই টিকিট বিক্রি। এমনকি এসব লটারি ড্র প্রতিদিন সরাসরি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যার ফলে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে লটারির খবর।
মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, ব্যস্ত ইজিবাইক চালকেরা লাউডস্পিকারে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নারী-পুরুষ, এমনকি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও লোভে পড়ে কিনছেন ২০ টাকার লটারি-কেউ কেউ কিনছেন ১০টি বা তার বেশি। এতে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ।
মেলা আয়োজকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জেলা প্রশাসককে ভুল তথ্য দিয়ে মেলার অনুমতি নিয়েছে। যদিও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, লটারির টিকিট বিক্রির বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। তবে, ৬ এপ্রিল রাণীশংকৈল থানা পুলিশ লটারি বিক্রির সময় তিনটি ইজিবাইক, একটি লটারির বাক্স এবং কয়েকজনকে আটক করে। পরে মেলা কমিটির মুচলেকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সেই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েও থেমে নেই লটারি বাণিজ্য। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর মেলা প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরে যাদু দেখানোর নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য। এসব নাচ দেখতে গিয়ে বিব্রত হচ্ছেন পরিবারসহ আসা দর্শনার্থীরা। স্থানীয় বাসিন্দা জহির জানান, যাদু দেখার জন্য টিকিট কেটে ভিতরে গিয়ে অশ্লীল নাচ দেখে পরিবারের সবাই নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসেছেন।
এসএসসি পরীক্ষার ঠিক আগে মেলার উচ্চ শব্দের মাইকিং পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করছে বলেও অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। বাদল নামে একজন বলেন, ‘দু’দিন পরই এসএসসি পরীক্ষা। অথচ মাইকিং চলছে সকাল-রাত।’
পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাবুল বলেন, ‘প্রবেশ টিকিটের সঙ্গে লটারি বিক্রি অনুচিত। লটারির বিরোধিতা শুরু থেকেই করা হয়েছে। তবুও এটি বন্ধ হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মেলার প্রবেশ টিকিটে লটারির বিষয়টি জানানো হয়েছিল। আলাদা করে টিকিট বিক্রির বিষয়টি আমাদের অজানা। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের নমনীয়তায় মেলা যেন রূপ নিয়েছে জুয়ার আসরে। সবারই দাবি-অবিলম্বে এই লটারি বাণিজ্য ও অশ্লীলতা বন্ধ হোক।
আবু সালেহ/এমআই