Logo

সারাদেশ

সড়কজুড়ে ভিজিটিং কার্ডে অনৈতিক কাজের প্রচার

Icon

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮

সড়কজুড়ে ভিজিটিং কার্ডে অনৈতিক কাজের প্রচার

ঢাকা জেলার আশুলিয়ার সড়ক-মহাসড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতে গেলেই চোখে পড়বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা রঙের ভিজিটিং কার্ড। আবাসিক হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে এসব ভিজিটিং কার্ডে। এ ছাড়াও কার্ডে রয়েছে হরেক রকম দাদা-ভাইদের নাম এবং নাম্বার। দিন দিন যত্রতত্র পড়ে থাকা এই ভিজিটিং কার্ড নিয়ে রহস্য বাড়ছে।

সড়কের পাশে ফুটপাত কিংবা ফুটওভার ব্রিজ, পাড়া-মহল্লার আঞ্চলিক সড়ক কিংবা অলিগলির রাস্তা—  রঙিন ভিজিটিং কার্ড ছেয়ে গেছে সবখানে। কখন, কারা এই কার্ড ছিটিয়ে দিচ্ছে— এ সব নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

গত কয়েক দিনে সরেজমিনে আশুলিয়ার বাইপাইল, পল্লীবিদ্যুৎ, নবীনগর, ইউনিক, জামগড়া, নরসিংহপুর, ডিইপিজড, বলিভদ্র, শ্রীপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়ক-মহাসড়কসহ ফুটপাত এবং ওভারে ব্রিজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন নামের ভিজিটিং কার্ড।

শুধু সড়ক, ফুটপাত কিংবা ওভারব্রিজ নয়, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনেও এসব ভিজিটিং কার্ড ফেলে রাখা হয়েছে।

পড়ে থাকা এসব কার্ডে লেখা রয়েছে, ‘রিপন দাদা, মামুন ভাই, আকাশ ভাই, বাদল ভাই, সূর্য ভাই, রাশেদ ভাই, সামি ভাই, জসিম ভাই ও জুয়েল ভাইয়ের’ নাম এবং নাম্বার। এ ছাড়াও কিছু কিছু ভিজিটিং কার্ডে ‘দুবাই গেস্ট হাউস, হোটেল হিমালয় আবাসিক ও পদ্মা গেস্ট হাউস’সহ বিভিন্ন নামের গেস্ট হাউস এবং আবাসিক হোটেলের নাম লেখা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌনকর্মী সরবরাহকারী কিছু দালাল চক্র এসব ভিজিটিং কার্ড রাস্তা-ঘাটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ সকল ভিজিটিং কার্ডে চক্রের  নাম ও নাম্বার দেওয়া রয়েছে। মূলত দ্রুত যৌন ব্যবসার প্রচারের লক্ষ্যে এমন কৌশল বেছে নিয়েছে চক্রটি। রাতের আঁধারে অথবা ভোরের নিরিবিলি সময়ে সড়কে এ কার্ডগুলো ছড়িয়ে- ছিটিয়ে রেখে যায় তারা। যাতে করে খুব সহজেই সকলের নজরে আসতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিজিটিং কার্ডগুলোর নাম ও নাম্বার ব্যবহারকারীরা মূলত কয়েক ধাপে নারী যৌনকর্মী সরবরাহ করে থাকে। প্রথমত ভিজিটরকে তাদের নিজস্ব আবাসিক হোটেল বা গেস্ট হাউজে ডেকে নিয়ে যৌনকর্মী সরবরাহ করে। এ ছাড়া যৌনকর্মীকে ভিজিটরের বাসার ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়াসহ যৌনকর্মীর বাসা কিংবা ফ্ল্যাটে ভিজিটরকে পৌঁছে দেওয়ার কাজটিও করে থাকে তারা। মূলত এরা যৌন কর্মীর দালাল হিসবে কাজ করে।

রাস্তায় পড়ে থাকা হোটেল হিমালয় আবাসিকের একটি ভিজিটিং কার্ডের নাম্বারে ফোন করা হলে এক মধ্যবয়সীর কণ্ঠ ভেসে ওঠে। তিনি জানান, হোটেল হিমালয় আবাসিকে মাত্র ১৩৫০ টাকায় রুম পাওয়া যাবে। যে কাউকে নিয়ে থাকা যাবে নির্ভয়ে। আর তারা যদি রাত্রিকালীন (অসামাজিক কাজের জন্য) সঙ্গীর ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এক রাতের জন্য ৩৫০০ টাকা দিতে হবে।

পুলিশি ঝামেলা হবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হোটেল শতভাগ নিরাপদ। মেইন রোডের পাশে অবস্থিত। এখানে ঝামেলা-টামেলা হবে না। এটা পুরাতন হোটেল, যাদের নতুন হোটেল তাদের কাগজপত্র থাকে না। তাদের সমস্যা হয়। এটা শতভাগ সিকিউর হোটেল।

হোটেলের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, আশুলিয়া থানার আধা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেই অন্তত ৫/৬ টি আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। প্রতিনিয়ত এসব গেস্ট হাউজে চলছে অসামাজিক কার্যক্রম, ‘কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না’।

আবাসিক হোটেলে চলা অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশ কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে— জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনূর কবির জানান, খুব শিগগিরই এসব জায়গায় অভিযান চালনো হবে।

হাসান ভুঁইয়া/এটিআর


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর