তদন্ত প্রতিবেদন
সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি, পুড়েছে ৬.৬৩ একর বন

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৮
-67ff34533ed68.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
সুন্দরবনের শাপলার বিল ও টেপার বিলে সাম্প্রতিক দুটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্রায় ৬ দশমিক ৬৩ একর বনভূমি। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গাছপালা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের। তবে আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটি অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। শাপলার বিলে ৪ দশমিক ৪৩ একর এবং টেপার বিলে ২ দশমিক ২০ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের পক্ষ থেকে রবিবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে বন অধিদপ্তরের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের কমিটি এখনও তদন্ত করছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাপলার বিলে বলা গাছ, সুন্দরী ও গেওয়া গাছ পুড়ে গেছে। টেপার বিলেও বলা ও গেওয়া গাছসহ প্রাণিবৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষতির মধ্যে শুধু বলা গাছেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।
তদন্ত কমিটির প্রধান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাস জানান, সুন্দরবনের শাপলার বিল এবং টেপার বিলে আগুনের ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাকে ওই দুটি কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে তারা সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারলেও সম্ভাব্য সাতটি কারণ চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাপলার বিলে আগুনে ৩ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের ১০ কুইন্টাল সুন্দরী গাছ, তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার কুইন্টাল বলা গাছ, ১ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের পাঁচ কুইন্টাল গেওয়া গাছ পুড়েছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষতি ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, টেপার বিলে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার কুইন্টাল বলা গাছ, ৪২০ টাকা মূল্যের দুই কুইন্টাল গেওয়া গাছ এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ক্ষতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।
তদন্ত কমিটির চিহ্নিত সাতটি সম্ভাব্য কারণ হলো
- মৌয়াল বা বাওয়ালীদের ফেলে যাওয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুন।
- মৌচাক সংগ্রহের সময় ধোঁয়া সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে আগুন।
- গবাদিপশু চরাতে যাওয়া লোকজনের অসাবধানতা।
- মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো।
- বন বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্য।
- নদী ও খাল ভরাট হয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় ভূমি শুকিয়ে যাওয়া।
- ভোলা নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে অবৈধ প্রবেশ সহজ হওয়া এবং শুকনো পাতার ঘর্ষণে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টির সম্ভাবনা।
সুন্দরবনে ভবিষ্যতে আগুন লাগা প্রতিরোধে প্রতিবেদনে স্বল্প মেয়াদি, মধ্যম মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি করণীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। ১৮ দফা সুপারিশে যা রয়েছে-
- মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে সুন্দরবনের ২৪, ২৫ ও ২৭ নম্বর কম্পারমেন্টে মধু আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
- অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
- ভোলা নদীসহ সংযোগকারী সব নদী ও খাল পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা।
- ভোলা নদীর পাড়ে বাঁধ কেটে জোয়ারের পানি সুন্দরবনে ঢোকার পথ তৈরি করা।
- অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকাগুলোতে স্থানীয়দের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন।
- বলা ও নলখাগড়া গাছ আগেই অপসারণের অনুমতি প্রদান।
- বন স্টেশন ও ক্যাম্পগুলোতে শ্যালো মেশিন ও পাইপের মাধ্যমে ছোট অগ্নিনির্বাপণ ইউনিট গঠন।
- আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম, জলাধার নির্মাণ এবং ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন।
- ফায়ার লাইন তৈরি, বনের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ ও ড্রোন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা।
- শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ।
- ধোঁয়া দেওয়ার জন্য ‘স্নোকার’ যন্ত্র ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বন বিভাগের সহায়ক প্রতিষ্ঠান সিপিজি ও ভিটিআরটি সদস্যদের সম্মানীভাতা ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান।
- আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া।
গত ২২ মার্চ সকাল ৭টার দিকে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার টেপার বিলে আগুন দেখতে পান বন বিভাগের কর্মীরা। এরপর ২৩ মার্চ সকাল ১১টার দিকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার শাপলার বিলেও আগুন দেখা যায়। বন বিভাগের একাধিক টিম এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা টানা চারদিন চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী আগামীতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডিআর/এমএইচএস