Logo

সারাদেশ

মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়ে তীব্র বিতর্ক

Icon

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২২

মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়ে তীব্র বিতর্ক

চাঁদপুরের মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এক সময় নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ সৈনিক’ বলে পরিচয় দেওয়া এ অধ্যক্ষ এখন নিজ মুখেই দাবি করছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন এবং বর্তমানে সাচ্চা বিএনপি!

খোঁজ নিয়ে ও তার নিয়োগ-সংক্রান্ত কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালে সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করা হয়। একই সময়ে জাতীয়করণ হয় মতলব ডিগ্রি কলেজ। এ সুযোগে আবুল কালাম আজাদ নিজ এলাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তদবির শুরু করেন। তার এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠ চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার ও আবুল কালাম আজাদের ভাই কাজল তদবিরে সহযোগিতা করেন। নিজ ভাই তার নিয়োগে তদবির করেছিলেন—এ তথ্য অধ্যক্ষ আজাদ নিজেই স্বীকার করেছেন।

এদিকে আবুল কালাম আজাদকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন ওই সময়কার চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুল আমিন রুহুল। তিনি ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে এক ডিও লেটারে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর উল্লেখ করেন, ‘আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বিশ্বস্ত সৈনিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন, সরকারের আদর্শ ও উদ্দেশ্য এবং গৃহীত নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সর্বোপরি ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য তাকে মতলব কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা প্রয়োজন।’

এছাড়াও আবুল কালাম আজাদকে ‘আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সুপারিশ করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠ রতন কুমার মজুমদার। তিনি মন্ত্রীর বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর বরাবর ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, মতলব কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। নতুন অধ্যক্ষ দরকার। আগে ভুলক্রমে মাছুম বিল্লাহ নামে ইসলাম শিক্ষার জামায়াতপন্থি একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই আদেশ বাতিল হয়। আবুল কালাম আজাদ নামে মতলবের একজন শিক্ষক এখানে যোগদানের জন্য দরখাস্ত করেছেন।

রতন কুমার চিঠিতে আরও লেখেন, ‘প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি, যাচাই-বাছাই করেছি। তিনি আমাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী। উনার নিয়োগের ব্যাপারে আপার (শিক্ষামন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলেছি। মাউসির ডিজি অবগত আছেন। মতলবের স্থানীয় সংসদ সদস্যও ডিও লেটার দিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও অনুরোধ জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, দেশবিরোধী চক্রান্ত, অনর্গল মিথ্যাচারসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থান নেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।’

নিয়োগের পূর্বে আবুল কালাম আজাদ (পরিচিতি নং-০০০০৩৩৫৭) সহযোগী অধ্যাপক (প্রাণিবিদ্যা), বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর মতলব কলেজে সহযোগী অধ্যাপক (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০২০ সালের ৩০ জুলাই তিনি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২০ মার্চ থেকে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে একই কলেজে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবুল কালাম আজাদ নিজেকে ঘোষণা করেন ‘সাচ্চা বিএনপি’ হিসেবে। অথচ এর আগে তিনি ২০২৪ সালের ৫ জুন কলেজে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়েও কীভাবে এখনো তিনি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল রয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যেভাবেই হোক, আমি এখন পর্যন্ত টিকে আছি। আমাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে—এমন কোনো কাগজপত্র আমি দেখিনি। তবে ডিও লেটার জমা দিয়েছি।’

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে ছিলাম, সেখানে সবাই ছিল ছাত্রদলের। তবে আমি সক্রিয় ছিলাম না, কারণ আমি পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলাম। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক’—এ কথা উচ্চারণ করতে না পেরে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি এবং গা জ্বলে উঠত।’

আলামিন ভূঁইয়া/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর