-67ffca67d553c.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
একসময় গ্রামবাংলার মেলা, হাট, স্কুল কিংবা খোলা মাঠে জমজমাট আসর বসতো পুতুল নাচের। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ছুটে যেতেন তা দেখতে। এখন সে চিত্র আর দেখা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ। সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছেন এর শিল্পীরাও।
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় যারা পুতুলনাচ দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নেই সরকারি সহযোগিতা, নেই তেমন আয়-রোজগার।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ত্রিমোহনী গ্রামের 'কিশোরী পুতুলনাচ থিয়েটারের' পরিচালক বাবু মিয়া বলেন, ‘৩০ বছর আগে যাত্রাপালায় কাজ করতাম। সেখানেই পরিচয় হয় মনিকা পুতুলনাচের মালিক শ্যামল মাস্টারের সঙ্গে। তাঁর কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় পুতুল সেট কিনে দল গঠন করি। প্রথমে কুড়িগ্রামে, পরে অন্যান্য জেলাতেও অনুষ্ঠান করি।’
তবলা বাদক স্বপন বর্মণ বলেন, ‘এ পেশায় আছি ৩০ বছর। একসময় প্রচুর শো হতো। এখন আর মানুষ দেখে না, আয়ও কমে গেছে। মোবাইল আর ডিজিটাল বিনোদনের যুগে পুতুলনাচ টিকে থাকছে না।’
মূকনাট্যশিল্পী হোসেন আলী বলেন, ‘অনেক সময় অনুমতি পাওয়া যায় না। অন্য কিছু দল পুতুলনাচের আড়ালে অশ্লীলতা করে, ফলে আমাদেরকেও সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সরকারি কোনো সহায়তা নেই বললেই চলে।’
পালাকার আবুল হোসেন বলেন, ‘বছরে দু-একবার সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে। সেখানেও ৪০০–৫০০ টাকা মজুরি। বাকি সময় দিনমজুর করেই সংসার চালাই।’
নাট্যশিল্পী মোজাম্মেল ও তাঁর স্ত্রী নুরবানু বলেন, ‘২০ বছর ধরে পুতুলনাচ বন্ধ প্রায়। এখন বাচ্চাদের খাওয়ানোই কষ্টকর।’
জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আলমগীর কবির বলেন, ‘মনিকা পুতুলনাচ অ্যান্ড থিয়েটার দলের দুজন শিল্পী সরকারিভাবে ভাতা পাচ্ছেন। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে আনার চেষ্টা চলছে। সরকার পুতুলনাচ নিয়ে আন্তরিক, প্রদর্শনীতে কোনো বাধা নেই।’
তবে শিল্পীরা বলছেন, কেবল আন্তরিকতা নয়, টিকে থাকার জন্য দরকার নিয়মিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা। নইলে পুতুলনাচের মতোই হারিয়ে যাবে এ শিল্পের শেষ প্রজন্মটিও।
এআরএস