৩১ বছর পর বন্ধ হলো বান্দরবানের মেঘলা চিড়িয়াখানা

বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৩

৩১ বছর ধরে অনুমোদনহীনভাবে পরিচালিত বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১১টি বন্যপ্রাণী।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে জেলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য বিভাগের একটি দল অভিযান চালিয়ে প্রাণীগুলো উদ্ধার করে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে পাঠায়।
সম্প্রতি ‘ন্যাচার বাংলাদেশ’ নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিড়িয়াখানার একটি অসুস্থ ভাল্লুকের ভিডিও পোস্ট করে। বিষয়টি একজন বিচারকের নজরে এলে গত ১০ মার্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বৈধতা যাচাইয়ের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানায় গিয়ে তারা দেখতে পান, পশুদের সঠিকভাবে লালন-পালনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি সংরক্ষণের কোনো বৈধ অনুমতিও নেই।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, মেঘনা চিড়িয়াখানার খাঁচাগুলো অত্যন্ত ছোট। সেখানে আলো-বাতাস প্রবেশের উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। প্রাণীগুলোকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাদের সঙ্গে একরকম অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভাল্লুক, বানর, মায়া হরিণসহ মোট ১১টি প্রাণী রয়েছে।
নিয়ম মেনে মেঘলা চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না—জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য বিভাগের কর্মকর্তা নুর জাহান বলেন, দেশীয় কোনো প্রাণী কেউ ইচ্ছামতো সংরক্ষণ করতে পারে না। শুধু চিত্রা হরিণ সংরক্ষণের অনুমতি থাকলেও মেঘলায় রাখা হয়েছিল মায়া হরিণ। যা স্পষ্টত আইন লঙ্ঘন। এ ধরনের চিড়িয়াখানা পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি জানান, ভবিষ্যতেও যেসব স্থানে বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে বন্দি করে রাখা হবে, সেখানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হবে।
ন্যাচার বাংলাদেশ সংগঠনের সদস্যরা জানান, আমরা পরিবেশ ও প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করি। ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে বিষয়টি নজরে আনি এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে প্রাণীগুলোর মুক্তি নিশ্চিত করতে পেরে আমরা খুশি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সাল থেকে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে চিড়িয়াখানার নামে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল। তবে এর কোনো আইনি অনুমোদন ছিল না। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই চিড়িয়াখানা পরিচালিত হয়ে আসছিল পর্যটকদের বিনোদনের উদ্দেশে।