সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে অভিযান
নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করল দুদক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৮

কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি ও ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বুলবুল আহমেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। এ সময় দুদকের টিম তল্লাশি করে কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী হারুনার রশিদ হারুনের পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। হারুন ওই টাকার উৎস সম্পর্কে দাবি করেছেন, টাকাগুলো তার ব্যক্তিগত ব্যবসার টাকা। তার কাছে টাকার উৎসের প্রমাণ চেয়েছে দুদক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা অফিসের নৈশপ্রহরীর কাছে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। উনি ব্যক্তিগত ব্যবসার টাকা বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, খোকসার সাব-রেজিস্ট্রার সপ্তাহে একদিন ডিউটি করেন। সেবাগ্রহীতাদের কাছে থেকে এই অফিসের স্টাফরা যে ফি আদায় করেন, সেগুলো দৈনন্দিন রেকর্ড করা হয় না। কিছু দিন পর সেগুলো রেকর্ড করা হয়। উনাদের নির্দেশনা দিয়েছি যে, যখন টাকা কালেকশন করবেন, তখনই রেকর্ড করবেন এবং চালানটা জমা দেবেন। আমরা রেজিস্ট্রির ফটোকপি চেয়েছি, রেকর্ডপত্র চেয়েছি। পরবর্তীতে আমরা কমিশন বরাবর রিপোর্ট দাখিল করব।
কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। অফিসটি ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। দীর্ঘদিন ধরে দলিল লেখক, তাদের লোকজন, স্ট্যাম্প-ভেন্ডারের মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী বেশ কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্র রমরমা ঘুষ-বাণিজ্য করে আসছে। ঘুষের টাকার ভাগ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেটে চলে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালালচক্রের মাধ্যমে প্রতি দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। নামের ভুল থাকলে ঘুষ দিতে হয়। দলিলের দাম বেশি নেওয়া হয়। এভাবে প্রতিটি সেবার জন্য পদে পদে ঘুষ আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী হারুনার রশিদ হারুন বলেন, আমি অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। আমার পকেটে ব্যক্তিগত ব্যবসার ৪০ হাজার টাকা ছিল। সেটা দুদক উদ্ধার করেছে। সেই টাকা ঘুষের টাকা না।
আপনি নৈশপ্রহরী, দিনের বেলায় অফিস করেন কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ দিনের বেলায় অফিসে এসে কাম-কাজ করি। মুহুরি-দলিললেখকরা কিছু টাকা-পয়সা দেন। বাড়তি কিছু টাকা পাই। এ জন্যই দিনের বেলায় অফিস করি।’
সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত। খোকসা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে রাসেল মল্লিক বলেন, অফিসের বাইরে কী হয়, বাইরে কে কী নেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে অফিস ও স্টাফরা সরকারি ফি’র বাইরে একটি টাকাও নেয় না। যে টাকাটা নেওয়া হয়, সেই টাকার রসিদও দেওয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযান পরিচালনা করেছেন। আমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি। উনারা রেজিস্ট্রির রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করেছেন। কী অনিয়ম-দুর্নীতি পেয়েছেন, সেটা উনারাই বলতে পারবেন। আমি উনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।
আকরামুজজামান আরিফ/এমজে