লালমোহনে ডায়রিয়ার প্রকোপ, চিকিৎসক সংকটে সেবাদান ব্যাহত

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩৩

হঠাৎ গরম শুরু হওয়ায় ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে শিশু, কিশোর, মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক রোগী। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়ায় মেঝেতেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। একদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট থাকায় ডায়রিয়ার রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সুপার ভাইজার তাছলিমা বেগম জানান, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, আমরা নার্সরাই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বেডে জায়গা না থাকায় ফ্লোরে, এমনকি হাঁটার জায়গায় বিছানা পেতে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
বদরপুর ইউনিয়ন থেকে আসা ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু সন্তান নাফিজা নিয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন রিনা বেগম। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। প্রথম কয়েকদিন বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করিয়েছি। ওই চিকিৎসায় ছেলের শারীরিক কোনো উন্নতি না হওয়ায় আজ শুক্রবার তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছি। এখন তার চিকিৎসা চলছে।
উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের গাইমারা এলাকা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. মালেক।
তিনি বলেন, ৪ দিন আগে সকালে ডায়রিয়া শুরু হয়। এরপর লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হয়েছি। এখান থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বদরপুরের রাব্বি (১০), ফরাগগঞ্জের হুজাইফা (৫), কালমার আসাদ আলী (৪৫), কিশোরগঞ্জের সেলিম (৫০) ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তাদের অভিভাবকরা জানান, হাসপাতালে ডাক্তার নেই। নার্সরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমরা বেডে জায়গা না পেয়ে রোগী নিয়ে ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগী সামান্য ভালো হলেই নাম কেটে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান জানান, প্রতি বছরের এপ্রিলে গরমের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বাড়ে। এর মূল কারণ পানির সমস্য। মানুষজন বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। লালমোহনের প্রায় ৩ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসার জায়গা লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গত এক সপ্তাহ ধরে লালমোহনে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যেখানে রয়েছেন শিশু থেকে বয়স্করাও। এছাড়া প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, লালমোহান হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ৩০টি। এর মধ্যে ৬ জন আছে। মেডিকেল অফিসার পরে দুইজন কর্মরত। এরমধ্যে একজনের স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি ছুটিতে রয়েছেন। বর্তমানে একজন মেডিকেল অফিসার, দুজন কনসালটেন্ট, একজন আরএমও ও একজন ইউএইচএফপিও রয়েছেন। নার্সের ৩৬টি পদ থাকলেও কাজ করছেন ১৪ জন। ডাক্তার ও নার্স কম থাকলেও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
এস মেজবাহ/ওএফ