Logo

সারাদেশ

পার্বত্য চট্টগ্রামে শেষ হলো সাংগ্রাই উৎসব

Icon

খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৫৪

পার্বত্য চট্টগ্রামে শেষ হলো সাংগ্রাই উৎসব

ছবি : বাংলাদেশের খবর

পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রাই’। সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের শেষ দিন শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বান্দরবানে রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত জলকেলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভিড় জমায় হাজারো পাহাড়ি-বাঙালি নাগরিক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকসহ উপস্থিত ছিলেন বিদেশি অতিথিরাও।

পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মারমাসহ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ উৎসবের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। গত ১৩ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় সাংগ্রাই। আর ১৪ এপ্রিল সাঙ্গু নদীর তীরে উজানী পাড়ায় বৌদ্ধ মূর্তি স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। এরপর চলে পূজা-অর্চনা, ছোয়াইং দান, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, বয়স্কদের পূজা, বিশেষ প্রার্থনাসহ নানা ধর্মীয় আচার।

১৫ এপ্রিল রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহণ, দড়ি টানা, বালিশ খেলা ও যুবতীদের অংশগ্রহণে নানা লোকজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। 

সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজার মাঠেই জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় জলকেলি ও সাংস্কৃতিক উৎসব। মারমা তরুণ-তরুণীরা এ আয়োজনে একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরোনো গ্লানি ও পাপাচার ধুয়ে ফেলার প্রতীকী উৎসবে মেতে ওঠে। এ সময় পরিবেশনা হয় মারমা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, পালাগান ও নিজস্ব সংস্কৃতির নানা প্রদর্শনী।

এবারের সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। যার মধ্যে ছিলেন- ইইউ অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার, ক্যাটরিনা মিলার, ইতালির প্রতিনিধিত্বকারী আন্তেনিও আলেসান্দ্রো, পাওলা বেলফিওরে ও নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি আইনজীবী আন্দ্রে কেরস্টেনস। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার ও সেনা জোন কমান্ডার এসএম মাহমুদুল হাসান।

সার্বিকভাবে বান্দরবান পরিণত হয়েছিল এক বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎসবের নগরীতে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উদযাপন করেছে পাহাড়ি এ সংস্কৃতির প্রাণবন্ত উৎসব। সপ্তাহব্যাপী এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ছিল সমবেত প্রার্থনা, তিনদিনব্যাপী জলকেলি, পিঠা উৎসব, বয়স্ক পূজা ও সাংগ্রাই মেলা।

এদিকে, খাগড়াছড়িতেও উদযাপিত হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রাই’ বা জলখেলী উৎসব। পুরাতন বছরের গ্লানি ও দুঃখকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরন করে নিতে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরে উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে বর্ণাঢ্য আয়োজনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ম্রাচাথোয়াই মারমা।

এ সময় তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা মারমা জনগোষ্ঠী নতুন বছরকে বরণ করতে ‘সাংগ্রাই’ উৎসবে ঐতিহ্যবাহী ‘দ’ ও ‘আলারী’ খেলাসহ নানা আয়োজন করি। এসব অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ। 

ম্রাচাথোয়াই মারমা বলেন, সাংগ্রাই উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ মারমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করে থাকে। আজকের সমাপনী অনুষ্ঠানে খেলাধুলায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। আমরা ভবিষ্যতেও আমাদের সংস্কৃতি রক্ষার্থে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখবো।

ছোটন বিশ্বাস/সোহেল কান্তি নাথ/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর