Logo

সারাদেশ

বিয়ে করার ‘নেশা’ বাবার, দুধ কিনতে না পেরে সন্তান বিক্রি মায়ের

Icon

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২০

বিয়ে করার ‘নেশা’ বাবার, দুধ কিনতে না পেরে সন্তান বিক্রি মায়ের

বিক্রি হওয়া নবজাতকের মা ও বাবা। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে দুধ কিন‌তে না পে‌রে মাত্র ২০ হাজার টাকায় নিজের সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক নারী‌র বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিষয়‌টি জানাজানি হয়। 

জানা গে‌ছে, আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী আশামনি খাতুন (২৫) সুচিকিৎসা ও দুধ কিনতে না পেরে ১৪ দিনের নবজাতক খাদিজা খাতুনকে বিশ হাজার টাকায় এক চা বিক্রেতার কা‌ছে বিক্রি ক‌রে দেন। 

এ বিষ‌য়ে যোগা‌যোগ করা হ‌লে আশামনি জানান, জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে স্থানীয় কুল্যার মোড়ের একটা ক্লিনিকে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন তি‌নি। ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ওষুধ ও দুধ কিনতে গি‌য়ে দিশাহারা হয়ে নিজের নবজাতক শিশু খাদিজাকে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনির তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান রবিউল-কাজল দম্পতির কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। 

আশামনি বলেন, ‘এ কাজ করেছি আমার সন্তানের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য।’ 

এ বিষয়ে ওই নবজাত‌কের কিনে নেওয়া চা বিক্রেতা রবিউলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী কাজল বলেন, ‘আমরা দরদাম করে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকাকার্ডে পিতা-মাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।’

এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ার জনৈক আফসার আলীর বাড়িতে ৫ম স্ত্রী হোসনেআরা খাতুনকে নিয়ে রাতযাপন করছিলেন কাদাকাটি গ্রামের সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে শামীম হোসেন (২৮)। 

শামীম পেশায় একজন ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রী। মা‌ঝেম‌ধ্যে তিনি ইটভাটায়ও কাজ ক‌রেন। স্বামীর ৫ম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর গ্রামে আসেন আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও তার ৫ম স্ত্রী হোসনেআরার সাথে সাক্ষাৎ হয় তার। এ সময় শামীম ও আশামনি বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হ‌লে সুকৌশলে পালিয়ে যান ৫ম স্ত্রী হোসনেআরা খাতুন। 

এর পরপরই শিশু‌টি‌কে বি‌ক্রির বিষয়‌টি জানাজা‌নি হয়। 

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গে‌ছে, যেখানে যান সেখানেই বিয়ে করেন শামীম। ২০১৬ সালে তিনি তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিয়ে করলেও সে বিয়ে টেকেনি। এরপর উপজেলার বদরতলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে নিয়ে পালান। পরে ওই নারীকে বিয়ে করেন তিনি। সে বিয়েও টেকেনি। 

পরবর্তীকালে নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করেন শামীম। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শামীম আশামনিকে বিয়ে করেন। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান বিলকিস। 

আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয়মাস আগে হোসেনেআরাকে বিয়ে করেছেন শামীম। এরপর থে‌কে সন্তান‌দের নি‌য়ে ক‌ষ্টে জীবনযাপন কর‌ছি‌লেন তি‌নি।

আব্দুস সামাদ/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর