গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ঝুট ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওসির ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস হয়েছে। রোববার (১৯ এপ্রিল) রাত থেকে ঝুট ব্যবসায়ী ও ওসির কথোপকথনের একটি অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়াতে থাকে। 

ফাঁস হওয়া ৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ওই অডিও কথোপকথনের মধ্যে ওসিকে বলতে শোনা যায়, তিনি স্থানীয় একজনের মধ্যস্থতায় সেলিম সিকদারকে কারখানা থেকে ঝুট বের করতে সহযোগিতা করছেন। স্থানীয় ওই ব্যক্তিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলে বিনা বাধায় কারখানা থেকে ঝুট বের করে নিয়ে যেতে পারবেন বলে ওসি সেলিম সিকদারকে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। 

অডিওর এক পর্যায়ে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘তোর নানা আমাকে দেখে না কেন? আমি এত কিছু করতেছি। চাপ নিতেছি। তোর নানাকে বলে আমাকে লাখপাঁচেক টাকা দিস। সাথে একটা ফুল হাতা গেঞ্জি লাগবে।’ 

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ঝুট ব্যবসায়ীর নাম সেলিম সিকদার। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার  নগরহাওলা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। অপরদিকে, কথোপকথনে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন মণ্ডল শ্রীপুর থানার ওসি হিসেবে ‍নিযুক্ত আছেন। 

এ বিষয়ে ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার জানান, এটি তার সঙ্গে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড। প্রায় ২ মাস আগে এই রেকর্ড ধারণ করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে তার মোবইল হ্যান্ডসেট হারিয়ে গিয়েছিল। পরে সেটি উদ্ধার করেছেন। তবে কীভাবে এটি ফাঁস হলো, তা তিনি জানেন না। 

সেলিম সিকদার জানিয়েছেন, ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলায় তাকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। রমজান মাসের ৬ দিন আগে ১ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি রিদিশা গ্রুপের ফর্মলা ওয়ান কারখানায় ঝুট ব্যবসা করতেন। 

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার করার দিন আমার কাছ থেকে ওসি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া ঝুট ব্যবসা করার সময় প্রাতি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা নিতেন ওই ওসি। টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিতেন। ভয়ে টাকা দিয়ে ব্যবসা কিছুদিন টিকিয়ে রেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিভিন্ন লোকজন দিয়ে ওসি হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি ফেসবুকে লাইভে এসে ছড়িয়ে পড়া অডিওটি ভুয়া বলে দাবি করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে যে অডিওটি ফাঁস হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি কখনো হতে পারে না। ওই ঝুট ব্যবসায়ীর নামে মামলা ছিল। আমাকে সারাদিন মানুষ প্রয়োজনে ফোন করে। সারাক্ষণ কথা বলি। কাজের কথা বলি। কাজের বাইরে কোনো কথা বলি না। ফাঁস হওয়া অডিওর বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

আতাউর রহমান সোহেল/এমজে