তাড়াশে রাশেদুল হত্যা
বন্ধুর হাতে খুন, উদ্দেশ্য ছিল স্ত্রীর প্রেমিককে ফাঁসানো

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৬

ঘাতক সেলিম হোসেন
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ক্লু-লেস রাশেদুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বন্ধুর হাতে নির্মমভাবে খুন হন রাশেদুল। উদ্দেশ্য ছিল স্ত্রীর প্রেমিককে ফাঁসানো। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আসামি সেলিম হোসেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হোসাইন জানান, সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সেলিম।
তদন্তে জানা যায়, তাড়াশ পৌরসভার আসানবাড়ি মহল্লার সেলিম হোসেনের স্ত্রী শেরজা আউয়াল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই স্ত্রীর প্রেমিক আউয়ালের প্রতি ঘৃণা জমতে থাকে সেলিমের মনে। এ সময় স্ত্রীর ব্যাগে আউয়ালের মানিব্যাগ, ছবি, সিমের কাগজ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি খুঁজে পান তিনি।
এসব ব্যবহার করে আউয়ালকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন সেলিম। বন্ধু রাশেদুলকে হত্যা করে আউয়ালকে দোষারোপ করতে মরদেহের পাশে এসব জিনিস রেখে দেন তিনি।
১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাশেদুল ইসলামকে (৪০) মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ধানক্ষেতে নিয়ে যান সেলিম। আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা ঘুমের ওষুধ স্পিডের বোতলে মিশিয়ে দেন তিনি। অচেতন হওয়ার পর কোমরে থাকা ছুরি বের করে রাশেদুলকে গলা কেটে হত্যা করেন।
পরদিন (১৯ এপ্রিল) দুপুরে তাড়াশ পৌরসভার তাড়াশ-রানিরহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশে ধানক্ষেতের আইল থেকে গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রাশেদুল তাড়াশ পৌরসভার উলিপুর মহল্লার মৃত আব্দুল কাদের ওরফে তুফান সরকারের ছেলে। তিনি পেশায় পিকআপ ভ্যানচালক ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের ভাই তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ক্লু-লেস মামলাটি তদন্তে নেয় সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেনের নির্দেশনায় ডিবির একটি চৌকস টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলিমকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে।
পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, ঘুমের ওষুধ মেশানো স্পিডের বোতল, ক্লেমনের বোতল, রাশেদুলের মোবাইল, মানিব্যাগ ও একটি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ।
ওসি একরামুল হোসাইন বলেন, বন্ধু রাশেদুলকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেলিম স্ত্রীর প্রেমিক আউয়ালকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। তাই রাশেদুলে লাশের পাশে আউয়ালের পরিচয় শনাক্তের জন্য কিছু জিনিস রেখে দেন। তার পরিকল্পনা ছিল—যদি আউয়াল জেল খাটে, তাহলে স্ত্রীকে আবার ফিরে পাবে।
- ফিরোজ আল আমিন/এটিআর