Logo

সারাদেশ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উৎসবে আরাকান আর্মি, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

Icon

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৪

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উৎসবে আরাকান আর্মি, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বান্দরবানের থানচিতে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবে মিয়ানমার বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা’র অভিযোগ উঠেছে থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য খামলাই ম্রোর বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৬ এপ্রিল থানচি উপজেলার রেমাক্রী বাজারে মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসবের আয়োজন করে উদযাপন কমিটি। উৎসবে মিয়ানমার বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা বাহিনীর পোশাক পরে অংশ নেন উৎসবে। 

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য ও থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো এবং গত ৫ আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের পর পলাতক আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই, অংপ্রুসহ আরও কয়েকজন। 

এ ঘটনায় উৎসবের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘এটি কোনো ছোটখাটো বিষয় বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ঘটনাটি রাষ্ট্রদোহিতার শামিল। দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পুনর্গঠিত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো সম্পৃক্ত থাকার ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় এবং দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত থানচি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন এবং এ সময় জেলা বিএনপির কমিটিতে সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও সম্প্রতি বাতিল হওয়া জেলা মৎস্যজীবী দলের সহসভাপতির পদে ছিলেন খামলাই। 

অপরদিকে, সদ্যঘোষিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সম্প্রসারিত ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়র সম্ভাবনাও রয়েছে। 

অভিযোগের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো বলেন, ‘বিএনপির বর্তমান কোনো কমিটিতে আমি নেই। সাবেক কয়েকটি কমিটিতে ছিলাম।’ 

চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূলত রেমাক্রী বাজারে সাংগ্রাই উৎসবটি আয়োজন করেছিল উৎসব উদযাপন কমিটি। আমি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম, ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখলাম উৎসবে আরাকান আর্মি এবং আওয়ামী লীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরাও রয়েছে। কিন্তু সবকিছু দেখেও ফিরে আসার সুযোগ ছিল না সামাজিক উৎসব হওয়ায়।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ওসমান গনি ও মুজিবুর রশীদ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু আহ্বায়কের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে কোনো কথা হয়নি। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না, জানা নেই।’

আরাকান আর্মি (এএ) সাংগ্রাই উৎসবে অংশ নেওয়ার ছবি-ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে থানচিতে ২২টি ইঞ্জিন বোটে করে সাঙ্গু নদীপথে আরাকান আর্মি এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম জানান, পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো ধরনের মামলা হয়নি।

তবে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএম ইমরুল হাসান জানিয়েছেন, ওই উৎসবে আরাকান আর্মির কোনো সশস্ত্র সদস্য ছিলেন না। যারা ছিলেন তারা সহযোগী বা সমর্থক। স্থানীয়দের সঙ্গে উৎসবে অংশ নিয়েছিল। 

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর পর বিজিবি কঠোরভাবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে কোনো আরাকান আর্মির সদস্য নেই।’

সোহেল কান্তি নাথ/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর