জরাজীর্ণ ভবনে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ঝুঁকিতে জনসেবা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৭

ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, ভিমের রড বেরিয়ে গেছে, দেয়ালে ফাটল—দেখলেই বোঝা যায় ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। তবু গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুঁকি নিয়েই চলছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস ভবনের ছাদ ও দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। সিলিং ফ্যানের হুক মরিচা ধরে ঝুলে পড়েছে, বিদ্যুতের তার জড়িয়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। বৃষ্টি হলে কাগজপত্র রক্ষা করতে টেবিলে পলিথিন চাপিয়ে রাখা হয়।
স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নির্মিত তৎকালীন কোর্ট ভবন হিসেবে পরিচিত বর্তমানের শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার ভবনে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় কার্যক্রম চলছে। অফিসটির পাশে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও এখনো তা হস্তান্তর হয়নি। ফলে পুরোনো ভবনেই চলতে হচ্ছে দাপ্তরিক কার্যক্রম।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী আশিস কুমার সাহা বলেন, বর্তমান ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে, কেউ কেউ দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। রেকর্ডপত্র রক্ষায় তীব্র সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত নতুন ভবন হস্তান্তর না হলে অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দলিলপত্র রাখার মতো জায়গাও নেই। গণপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদারকে বারবার জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।
জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা নজরুল ইসলাম ও জিয়াউল রহমান বলেন, বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি পড়ে, কাগজপত্র ভিজে যায়। আতঙ্কে থাকি কখন না আবার ছাদ ভেঙে পড়ে। দ্রুত নতুন ভবনে স্থানান্তর জরুরি।
দলিল লেখক জীবন বাবু বলেন, যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মানুষের মূল্যবান দলিল নিরাপদে রাখতে হলে নতুন ভবনেই কাজ শুরু করা উচিত।
১৪টি ইউনিয়ন আর পৌরসভার চাপ এক অফিসে
শৈলকুপা উপজেলা শহরের ওয়াপদা এলাকায় ৮০’র দশকে নির্মিত ভবনে চলছে অফিস কার্যক্রম। একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটিতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন মানুষ জমি-সংক্রান্ত কাজে এই অফিসে আসেন। এতে বেশ চাপ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
ভবন তৈরি হলেও নেই হস্তান্তর
২০২৩ সালের শুরুতে গণপূর্ত বিভাগের আওতায় পুরোনো ভবনের পাশে নতুন দুইতলা ভবন নির্মাণের কাজ পায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান মোল্লা ট্রেডার্স। কাজ প্রায় শেষ হলেও এখনো হয়নি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর।
শৈলকুপা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সোনালী খানম বলেন, কোর্ট ভবনে দীর্ঘবছর ধরে রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম চলছে; কিন্তু বর্তমানে ভবনটিতে ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের নতুন ভবন তৈরি হয়ে গেছে, তবে হস্তান্তর করা হয়নি। আমরা হস্তান্তরের জন্য বারবার চেয়েছিলাম। কিন্তু আশ্বস্ত করা হলেও এখনো স্থানান্তর সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষের গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ ও কাগজপত্র রেকর্ডরুমে সংরক্ষণ থাকে। ভবনটির ভিতরে বৃষ্টির পানি আসে। যেখানে-সেখানে আমরা কাগজপত্র নিরাপদ রাখতে পারছি না। যেহেতু বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ, বলতে গেলে প্রতিটি মানুষের সম্পদ এটি। আমরা চাই সবার এই সম্পদ যেন আমরা সুন্দরভাবে রক্ষা করতে পারি। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, আমরা যেন দ্রুত নতুন ভবনটি পেয়ে সেখানে উঠতে পারি এবং মানুষের চাহিদামতো সেবা দিতে পারি।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক শামীম হোসেন মোল্লা বলেন, ভবনের কাজ শেষ। একটি গভীর নলকূপের পরীক্ষার ফলাফল পেতে দেরি হয়েছিল। রিপোর্ট এসে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, মূল্যবান দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ এই ভবনে প্রবেশ করছেন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এম বুরহান উদ্দীন/এটিআর