
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের জন্য সরবরাহকৃত খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট টেন্ডারে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘মেসার্স শিরিন ট্রেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হাসপাতালের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ইজিপি টেন্ডারে চতুর্থ অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানের ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠানটি কাজটি পেয়ে যায়। ফলে লাখ লাখ টাকার সরকারি বরাদ্দের অপচয় হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টেন্ডার অনুযায়ী প্রতিদিনের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর খাবার বাবদ ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সকাল, দুপুর ও রাতে যথাক্রমে পাউরুটি, ডিম, মাছ-মাংস, ভাত, ডাল ও সবজি সরবরাহ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কিছুই দেখা যায় না।
রোগীরা জানান, সকালে দেওয়া হচ্ছে দুইটি বাসি পাউরুটি, সঙ্গে একটি সিদ্ধ ডিম ও এক চামচ চিনি। দুপুরে দেওয়া হয় ৭.৫০ গ্রাম ওজনের সিলভারকাপ মাছ, মোটা চালের ভাত ও পাতলা ডাল। রাতের খাবারে থাকে দুপুরের অবশিষ্ট অংশ।
বালাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট এলাকার রোগী বকুল বলেন, চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। পাতলা ডাল আর মাছ-মাংসে কোনো স্বাদ নেই। যে ভাত দেয়, গলা দিয়ে নামে না।
মহিলা ওয়ার্ডের রোগী নুরজাহান বেগম জানান, খাবারে কোনো মসলা নেই। দুপুরে যা খাওয়া যায়, রাতে সেটা মুখে দেওয়া যায় না।
একই ওয়ার্ডের রোগী মুনতাহানা বেগম বলেন, পেট ভরে না। অতিরিক্ত চাইলে দেয় না। ক্ষুধা নিয়েই থাকতে হয়।
হাসপাতালের পরিবেশ নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। প্রবেশমুখে ময়লার স্তূপ, শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী এবং দেয়ালজুড়ে পানের পিকের দাগ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ব্যবহৃত ওষুধের খোসা।
রোগীরা জানান, অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী বলেন, মুখ খুললেই চাকরি যাবে, তাই কিছু বলা যায় না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে খাদ্য সরবরাহকারী শাহিনুর ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামানও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- এটিআর