বালু তোলায় সাজা, এসিল্যান্ডকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে প্রচার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৮

মার্ক করা ব্যক্তি হলেন ইসরাইল। এ ছবি আওয়ামী লীগ নেতার সাথে তোলা। তাকে সাজা দেওয়া এসিল্যান্ডকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে প্রচার করেন তিনি।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সাজা দেওয়া হয়েছে চারজন বালু ব্যবসায়ীকে। তবে এ অভিযানে ক্ষিপ্ত হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসানকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন নাগেশ্বরী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ইসরাইল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২০ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে বাগডাঙ্গা বিলে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগে অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আশরাফুল আলম (৩৪) ও আলমগীর হোসেনকে (৩৭) তিন দিন এবং আব্দুল লতিফ (৩৮) ও মনিরুজ্জামানকে (৪০) পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই বালু তোলার পাইপ ভেঙে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক কাউন্সিলর ইসরাইল তার ফেসবুকে লেখেন, ‘সাত কর্মদিবসের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিগ্রস্ত, বদমেজাজী এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এসিল্যান্ড মাহমুদুল হাসান তার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে পাল্টা পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘অবৈধ বালু তোলা ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যদি অপরাধ হয়, তবে আমাকে কালই প্রত্যাহার করুন। গরিবের জমি রক্ষায় পাশে দাঁড়ানো যদি দোষ হয়, আমাকেও দোষী মানুন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে যদি আমি বদমেজাজী হই, তবে বিচার করুন।’
তার এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সাবেক কাউন্সিলরের পোস্ট একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
স্থানীয়রা জানান, সাবেক কাউন্সিলর ইসরাইল বালু ব্যবসায়ীদের পক্ষে তদবির করে এসিল্যান্ডকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। সুযোগ না পেয়ে তিনি ফেসবুকে অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন এসিল্যান্ড তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। এ বিষয়ে ডিসি ও ইউএনওকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী কমিশনার বলেন, ‘সাবেক কাউন্সিলর ঘটনাস্থলের ১৫০ মিটার দূরে নদীপারের অন্য পাশে ছিলেন। তার লাঞ্ছনার অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।”
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সাবেক এই কাউন্সিলরের আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে আগের ছবি। অনেকে মন্তব্য করছেন, ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইসরাইল, এখন দল পাল্টিয়ে নতুন দলের হয়ে প্রশাসনকে আক্রমণ করছেন। এর আগে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার মামলার আসামি হওয়ায় দল বদলের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় নাগেশ্বরী উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন প্রকাশ্য আক্রমণ নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। কেউ বলছেন, সিন্ডিকেট ভাঙার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এসিল্যান্ডকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কেউ যদি বাধা সৃষ্টি করে, প্রশাসনের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় তা প্রতিহত করা। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কাছে প্রশাসন নত হবে না।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আভাস মিলেছে।
ফজলুল করিম ফারাজী/এমজে