Logo

সারাদেশ

টাঙ্গাইলে দেড়শ বছরের ঐতিহ্য জামাই মেলা জমে উঠেছে

Icon

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২১:২৭

টাঙ্গাইলে দেড়শ বছরের ঐতিহ্য জামাই মেলা জমে উঠেছে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে রোববার পর্যন্ত।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরনেছা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মেলায় জামাই-বউ ছাড়াও সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। তাদের উপস্থিতিতে মেলা পরিণত হয়েছে উৎসবে।

প্রায় দেড়শ বছর ধরে সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ রসুলপুরে তিন দিনব্যাপী এ জামাই মেলা বসে। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের বিবাহিত মেয়েরা স্বামীসহ বাবার বাড়িতে আসেন। জামাইদের বরণ করে নিতে শ্বশুর-শাশুড়িরাও আগেভাগেই নানা প্রস্তুতি নেন।

ঐতিহ্য অনুযায়ী, মেলার সময় শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। জামাইরাও নিজেদের টাকা যোগ করে মেলা থেকে শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেন। জামাই-বউসহ সবাই মেলাটি আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন।

মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানি এসেছেন। বসেছে ছোট-বড় নানা ধরনের দোকান। রয়েছে খেলনা, প্রসাধনী, খাবার ও মিষ্টির দোকান। বৈশাখের ভ্যাপসা গরম সত্ত্বেও হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা। কেউ ঘুরে দেখছেন, কেউবা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। মেলায় আসতে পেরে দর্শনার্থীরা আনন্দিত।

রসুলপুর এলাকার জামাই আবদুল খালেক বলেন, ‘এই মেলাকে কেন্দ্র করে আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে শ্বশুরবাড়ি আসি। ঈদ বা অন্য উৎসব মিস হলেও জামাই মেলা কখনো মিস করি না। এবারও বাবা-মা ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। মেলায় এলে গ্রামীণ ঐতিহ্যে হারিয়ে যাই। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও আসতে পেরে ভালো লাগছে।’

শিল্পী রানী নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে ঘাটাইলে। মেলাকে কেন্দ্র করে বাবার বাড়িতে এসেছি তিন দিন আগে। গ্রামের অনেক মেয়েই বাবার বাড়িতে এসেছে, তাই গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ বইছে।’

রসুলপুরের বাসিন্দা লেখক রাশেদ রহমান বলেন, ‘প্রায় দেড় শ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের কাছে এটি ঈদ বা পূজা-পার্বণের মতোই এক বড় উৎসব। বৈশাখী মেলা হিসেবে শুরু হলেও এখন এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত।’

ব্যবসায়ী অমিত ঘোষ বলেন, ‘সন্ধ্যার পর মেলায় ভিড় বাড়ে। সারাদিন চমচম, রসগোল্লা, জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে, বিক্রিও তত বাড়ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী লালচান মিয়া বলেন, ‘মেলা জমে উঠেছে। জামাই মেলা হলেও অনেকে বাবা-মা, নাতি-নাতনিদের নিয়েও এসেছেন। আমার দোকানে নানা ধরনের আকরি ও খই ভালোই বিক্রি হচ্ছে।’

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব আনিসুর রহমান বলেন, ‘মেলা সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানি এসেছেন। খাবার, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, খেলনা, প্রসাধনীর পাশাপাশি মেলায় বসেছে একাধিক ফার্নিচারের দোকানও। রসুলপুরের এই মেলাটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম। আগামী রোববার সন্ধ্যায় মেলা শেষ হবে। তিন দিনে মেলায় দুই কোটি টাকার ওপরে বাণিজ্য হবে।’

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর