বরিশাল ও পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’

জাকারিয়া জাহিদ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫

বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর /সংগৃহীত ছবি
উন্নয়ন বৈষম্যে আবারও পিছিয়ে পড়ছে বরিশাল। চলতি মাসে জাতীয় একনেকে পাস হওয়া ১৬টি প্রকল্পের একটিও বরিশাল বিভাগে নেই। অপরদিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামকে। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে অর্ধেকের বেশি উন্নয়নে বরাদ্দ পেয়েছে চট্টগ্রাম।
একনেক সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরিশালবাসী। পায়রা সমুদ্র বন্দর ‘খাল’ বন্দরও হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়ে সরকারের এক উপদেষ্টার মন্তব্য নিয়ে পটুয়াখালী কলাপাড়াসহ বরিশালের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
তাদের মতে, ‘জমি-ভিটা সব হারিয়েছি আমরা। পায়রা বন্দরসহ ৩টি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কয়েকটি মেগা প্রকল্প এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র কিছুতেই মানতে পারবে না সম্পদ হারানো মানুষ।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পায়রা সমুদ্র বন্দরের ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ। পাশাপাশি মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসের পর পরিবহনের জন্য ৬ লেনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ ছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, শুরু থেকে বন্দর উন্নয়ন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের অন্য দুটি সমুদ্র বন্দর পুরাতন। মাত্র ৯ বছরের বন্দরের সাথে শত বছর ধরে চলা বন্দরের তুলনার করলে হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পায়রা বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে হওয়া ধরনের ষড়যন্ত্র এ অঞ্চলের মানুষ মোকাবিলা করবে।’
ভূমি অধিগ্রহণে ভিটামাটি হারানো ব্যবসায়ী রেহান উদ্দিন রেহান বলেন, ‘বাড়িঘর ও জমি হারিয়েছি। যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হলে এ অঞ্চলের মানুষ সবই হারাবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন শিকদার বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টার এ ধরনের বক্তব্যকে মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তিনি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে খালের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদি এ বন্দর খাল হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে এখানে মাদার ভেসেল সরাসরি জেটিতে ভিড়ছে?’
তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টার উচিত, এখানে এসে পায়রা সমুদ্র বন্দর ঘুরে দেখা। পায়রা বন্দর নিয়ে যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে, তাহলে এলাকার মানুষকে নিয়ে কলাপাড়া বিএনপি তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করবে।’
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জি এম আতায়ের রাব্বি বলেন, ‘উন্নয়ন বৈষম্যের দিক থেকে বরিশাল অনেক পিছিয়ে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ভাঙা থেকে কুয়াকাটা মহাসড়ক ৬ লেন জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি একনেকে ১৬টি প্রকল্প পাস হলেও বরিশালের কোনো প্রকল্প নেই।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিমানবন্দরকে আধুনিক করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এমনকি চীনের দেওয়া তিনটি হাসপাতালের একটি বরিশালে স্থাপন করার দাবি জানাচ্ছি। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আরও গতিশীল করতে হবে।’
একনেকে বিরূপ মন্তব্য ও প্রকল্প না থাকায় বরিশাল বিভাগের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করা। পায়রা সমুদ্রবন্দরকে আরও গতিশীল করতে কাজ করা। এছাড়া ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা। চীনের আধুনিকায়নের একটি হাসপাতাল বরিশাল স্থাপনের পাশাপাশি বিমানবন্দরকে আধুনিকায়ন করা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সনে আনুষ্ঠানিকভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম হয়। এ পর্যন্ত ১৮০ মিটারের বড় পাঁচ শতাধিক মাদার ভেসেল পায়রা সমুদ্র বন্দরে ভিড়তে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বন্দর থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
এমজে/ওএফ