যুবলীগ নেতার ১২০০ মণ ধান কেটে নিলেন যুবদল নেতা!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৭
-680db6ddb5249.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় যুবলীগ নেতার জমির পাকা ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের ছায়ার হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) ধান কেটে নেওয়ার জমি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ভাতিজা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন যুবলীগ নেতা তকবির হোসেনের ১৫ একর জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন। তকবির শাল্লা উপজেলায় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি এলাকা ছাড়া রয়েছেন।
তকবির হোসেন বলেন, শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। এতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। থানা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরের জমি থেকে প্রভাব খাটিয়ে যুবদল নেতা জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে যায়। পুলিশকে জানিয়ে জমির ধান রক্ষা করা যায়নি। শনিবার সকালে পুলিশ গ্রামে গিয়েছিল। ধান কেটে নেওয়ার পর শনিবার সকালে জমি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুলতানপুর গ্রামের তকবির হোসেনের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। একই গ্রামের আলতাব হোসেনের পরিবার বিএনপির রাজনীতি করেন। রাজনৈতিক কারণে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে।সম্প্রতি হাওরের ধান পাকার সময় আসলে তকবির হোসেনদের জমির ধান না কাটতে হাওরের হারভেস্টার চালকদের নিষেধ করেন আলতাব হোসেন। পাশাপাশি জোর করে তাদের জমির ধান কাটবে বলে ঘোষণা দেয়।
বিষয়টি জানার পর শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেন তকবিরের ছোট ভাই নবীর হোসেন। এরপর রাতেই যুবদল নেতা আলতাব হোসেন ও ভাইদের নেতৃত্বে কয়েকটি হারভেস্টার দিয়ে প্রায় ১৫ একর জমির ১২০০ মণ ধান কেটে নিয়ে যায়।
জমির মালিক যুবলীগ নেতা তকবির হোসেন বলেন, বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে তার ভাতিজা যুবদল নেতা আলতাব ও তার ভাইরা আমাদের প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে গেছে। শুক্রবার সকালেই ছোট ভাইকে দিয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। এতে কোনো কাজ হয়নি। জমি থেকে থানার দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। ধানকাটার সময় পুলিশকে জানালে পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ১২০০ মণ ধান কেটে নিয়েছে তারা।
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা আলতাব হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বড় ভাই দলিল লেখক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার কথা সব মিথ্যা। আমরা কারো জমির ধান কাটিনি। পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছে।’
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ধানকাটার বিষয়ে আমি জানি না। আমি থানা সদরে থাকি। জমি তার ভাতিজাদের দাবি জানিয়ে বললেন, ৮ কেদার জমি তকবিরের দাদার কাছ থেকে অনেক আগে আনোয়ারের বাবা কিনেছিল। তকবিররা গত ১০ বছর ধরে জোর করে দখলে রেখেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, ধান কাটার খবর পেয়ে ও উপজেলা কৃষি অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ৭-৮ একর জমির ধান কাটা দেখেছি। শুনেছি দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখার জন্য থানার ওসিকে বলা হয়েছে।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ৮ কেদার জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছে। রাতের আধারে ধানকাটার খবর পেয়ে আমরা গিয়েছিলাম। যাওয়ার আগেই জমির ধান কেটে নিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আব্দুল হালিম/এমবি