বাংলাদেশের খবরে সংবাদ প্রকাশ
খুলনায় বিতর্কিত সেই ছাত্রনেতাকে অব্যাহতি

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০২

অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের খবর-সহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। অভিযোগ আমলে নিয়ে সংগঠনটির খুলনা জেলা কমিটি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়।
তাকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না- এ বিষয়ে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা চেয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সংগঠনটির খুলনা জেলার দপ্তর সেল সদস্য শিহাব সাদনাম রাতুল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কয়রা উপজেলার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী প্রসঙ্গে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে। এ জন্য তাকে খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি তাসনিম আহমেদ ও সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির নির্দেশক্রমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সংগঠনের সব দায়িত্ব ও কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না- সে বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা কমিটির কাছে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, গোলাম রব্বানী খুলনার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক বছর আগে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে কয়রায় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা করেন। এর আগে কিছুদিন একটি বেসরকারি পলিটেকনিকে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তবে এখনো পড়াশুনা করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোশাররফ হোসেন রাতুলকে কেন্দ্র করে কয়রায় ছাত্র সমন্বয়কদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। রাতুলের সঙ্গে গোলাম রব্বানী সহ-সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর কয়রার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা প্রশংসা কুঁড়ালেও কিছুদিনের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে।
একটি মাদ্রাসার শিক্ষক আ. রউফকে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকতে দেখা যায়। একসঙ্গে কাজ করার কিছুদিনের মধ্যে গোলাম রব্বানী ও আ. রউফের কার্যক্রম নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে রাতুল ও তার অনুসারীদের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। কোথাও আন্দোলনে অংশ না নিয়েও গোলাম রব্বানী কয়রায় একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য আহ্বায়ক পদ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আর রাতুল নিজেকে সমস্ত কার্যক্রম থেকে গুটিয়ে নিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন।
গোলাম রব্বানী এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় পুলিশ-প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। তাকে বিজয় দিবসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করতেও দেখা গেছে। সেই ছবি তার ফেসবুক প্রোফাইলের কভার ফটো হিসেবে ব্যবহার করে রেখেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজ আদায় করার অভিযোগও রয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। তাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য জেলা কমিটি কর্তৃক সাত সদস্যবিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠিত হলেও তাদের সুপারিশ আমলে না নিয়ে গোলাম রব্বানীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রার আহ্বায়ক করা হয়। ওই সময় অভিযোগ ওঠে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে এমনটি হয়েছে।
আহ্বায়ক বনে গিয়ে গোলাম রব্বানী আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একের পর এক অপকর্ম করতে থাকেন। নৌকা প্রতীকের জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা আদায় করতে থাকেন। তার বিপক্ষে গেলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন, এমনকি মামলায় নাম যুক্ত করে দেওয়ার অভিযোগও আছে।
কাওয়ালী সন্ধ্যা ও এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা বলে ইফতার মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেন। চাঁদাবাজি বিষয়ে বাংলাদেশের খবরসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্ররা। নিজ সংগঠনের অধিকাংশ নেতা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
প্রতিবেদন করায় সাংবাদিকদের দমন করতে বিভিন্ন কূটকৌশল করতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় গালিসহ হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেন। হঠাৎ ২০১৩ সালের জামায়াতের মিছিলে হামলার একটি ঘটনায় কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা করা হয়।
ওই মামলার বাদী নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সবিরন ও তার পরিবারের বক্তব্য নিয়ে ‘বাদী জানেন না আসামি কারা, নেপথ্যে সমন্বয়ক’ শিরোনামে বাংলাদেশের খবরের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিপক্ষ দমন ও চাঁদাবাজির সুবিধার্থে বাদীকে ফুঁসলিয়ে গোলাম রব্বানী ও তার সহযোগীরা মিলে এই হত্যা মামলা করেন বলে স্থানীয়দের দাবি।
এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, মানবাধিকার সংগঠনসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মহরম হাসান মাহিম বলেন, ‘কয়রা উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষের প্রেক্ষিতে সংগঠন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। যথাযথ কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যায়কারীর সঙ্গে আমাদের আপস নেই।’
তরিকল ইসলাম/এমজে