Logo

সারাদেশ

জীববৈচিত্র্য হুমকিতে

অবাধে দেয়াং পাহাড় কাটছে কেইপিজেড

Icon

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৩

অবাধে দেয়াং পাহাড় কাটছে কেইপিজেড

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) কর্তৃপক্ষ আবারও নির্বিচারে পাহাড় কেটে চলেছে। নতুন কারখানা তৈরির অজুহাতে একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করছে তারা। এভাবে চলতে থাকলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেয়াং পাহাড়।

এর আগে উচ্চ আদালত পাহাড় কাটা বন্ধে কেইপিজেডকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবু কখনো দিনে আবার কখনো রাতে পাহাড় কেটে চলেছে সংস্থাটি। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় কৃষিকাজ। পাহাড়ে বসবাসকারী বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে নেমে এসে ফসল নষ্ট করছে, এমনকি বিগত ৮ বছরে বন্য হাতির আক্রমণে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৈরাগ এলাকার কারখানার দক্ষিণ পাশে এস্কেভেটর দিয়ে উঁচু পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। সেই মাটি স্থানান্তর করে গড়ে তোলা হচ্ছে কারখানা, রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো। পরিবেশবিদদের মতে, এই কর্মকাণ্ড পুরোপুরি বেআইনি এবং ভবিষ্যতে ভয়াবহ ভূমিধসসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ বেসরকারি ইপিজেড আইনে কোরিয়ান কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশন চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াং পাহাড় এলাকায় ২ হাজার ৪৯২ একর জমিতে কেইপিজেড স্থাপন করে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যেখানে যেভাবে রয়েছে সেভাবেই কারখানা নির্মাণ করতে হবে এবং কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না।

কিন্তু কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় এসব শর্ত লঙ্ঘন করেছে। পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করে। ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি চিঠিতে পাহাড় ড্রেসিংয়ের অনুমতি দিলেও পাহাড় ধ্বংসের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়।

২০১২ সালে পাহাড় কাটার অভিযোগে কেইপিজেডের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। চুক্তি অনুযায়ী কেইপিজেডকে ৩৩% জমিতে বনায়ন, ১৯% জলাধার ও খালি জায়গা রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রকৃতভাবে কারখানা নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৮৪০ একর। অতিরিক্ত জমির ব্যবহার ঠেকাতে পূর্ববর্তী সরকার ৫০০ একর জমির মালিকানা দিয়ে বাকি জমি ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে অন্তবর্তী সরকার সম্প্রতি এই জমির মালিকানা কেইপিজেডকে বুঝিয়ে দেয়। সংস্থার চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মাননা হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। এরপর থেকেই নতুন করে শুরু হয় কারখানা নির্মাণ ও পাহাড় কাটার কার্যক্রম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার আমাদের বলেছে দ্রুত কারখানা স্থাপন করতে। তাই আমরা বসে নেই। আমরা পরিবেশের ক্ষতি না করেই পাহাড়ের টিলা সমতল করছি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই কাজ করছি।’

এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক মো. মঈনুদ্দিন ফায়সাল জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে খতিয়ে দেখা হবে—কতটুকু অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং তার বাইরে কেউ যাচ্ছে কি না। আপাতত মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে।

পাহাড় কাটা বন্ধে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা। তারা দ্রুত প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

এস এম সালাহউদ্দিন/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর