Logo

সারাদেশ

মানিকগঞ্জ হাসপাতাল

অপারেশন থিয়েটারের ‘গায়েব’ যন্ত্র ৪ বছর পর ‘আচমকা’ উদ্ধার

Icon

আফ্রিদি আহাম্মেদ, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৬

অপারেশন থিয়েটারের ‘গায়েব’ যন্ত্র ৪ বছর পর ‘আচমকা’ উদ্ধার

চার বছর আগে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের জন্য আনা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বাইপোলার ডায়াথার্মি যন্ত্রের মধ্যে ৯টি গায়েব হয়ে যায়। ঘটনাটি ২০২৩ সালে ধরা পড়লেও দীর্ঘ তদন্ত ও জবাবদিহিতার পরে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে যন্ত্রগুলো হঠাৎ করেই ‘উদ্ধার’ হয়েছে। 

তবে এগুলো এতদিন কোথায় ছিল, কে বা কারা সরিয়েছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে—‘গায়েব হওয়া যন্ত্র ফিরে এসেছে, এটাই বড় কথা!’

২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) মাধ্যমে ১০টি বাইপোলার ডায়াথার্মি যন্ত্র সরবরাহ করা হয়। এই যন্ত্র অস্ত্রোপচারের সময় রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সানি ট্রেডিং এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড একটি যন্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে অপারেশন থিয়েটারে ইন্সটল করে। বাকি ৯টি যন্ত্র স্টোররুমে রেখে হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক আরশেদউল্লা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কাজী এ কে এম রাসেল এবং অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তারের সাক্ষর নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সেগুলো বুঝিয়ে দেয়।

উদ্ধার হওয়া যন্ত্র।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সম্পদ ব্যবস্থাপনার অনলাইন এন্ট্রির জন্য পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, স্টোররুম এবং অপারেশন থিয়েটারে সেই যন্ত্রগুলো অনুপস্থিত। ১ ফেব্রুয়ারি জান্নাত আরা আক্তারকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক মো. বাহাউদ্দিন। 

জবাবে জান্নাত আরা জানান, তার কাছে শুধু একটি মেশিনই হস্তান্তর করা হয়েছিল।

এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ সরোয়ারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও তদন্তে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।

রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারে পাঁচটি বাইপোলার ডায়াথার্মি মেশিন আছে। এর মধ্যে দুটি ব্যবহৃত হচ্ছে, তিনটি এখনো বক্সে। বাকি পাঁচটি মেশিন নতুন অবস্থায় স্টোররুমে আছে। তবে মেশিনের বক্স এবং যন্ত্রের সিরিয়াল নম্বরের মধ্যে কোনো মিল নেই, যা আরও রহস্যজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।

তৎকালীন ইনচার্জ জান্নাত আরা আক্তার জানান, তার কাছে শুধুমাত্র একটি মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে যখন তিনি মেশিন চেয়ে আবেদন করেন, তখন বুঝতে পারেন একই মেশিন তাকে দ্বিতীয়বার দেওয়া হয়েছে। পরে স্টোরকিপার লুৎফর রহমান এই ভুল স্বীকার করে তার কাছে ক্ষমা চান।

স্টোরকিপার লুৎফর রহমান প্রথমে দাবি করেন, সব মেশিন আছে, তবে পরবর্তীকালে সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ সরোয়ার জানান, তিনি কী বলেছিলেন তা মনে নেই, তবে একজন ফার্মাসিস্টকে স্টোরকিপারের দায়িত্ব দিলে এমন ঘটনা হওয়াই স্বাভাবিক।

কমিটির সদস্য ডা. শেখ মোহাম্মদ জিয়াউর হক জানান, ২০২৩ সালের পরিদর্শনে তারা কোনো যন্ত্রই খুঁজে পাননি এবং অপারেশন থিয়েটারে তখন একটি মাত্র যন্ত্র ইন্সটল করা ছিল।

তত্ত্বাবধায়ক মো. বাহাউদ্দিন বলেন, “গায়েব হওয়া যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে, এটাই বড় কথা! কোথায় ছিল? কার কাছে ছিল? সেটা জেনে লাভ কী হবে!”

সরকারি হাসপাতালে কোটি টাকার সরঞ্জাম গায়েব হয়ে যাওয়ার চার বছর পর ‘আচমকা উদ্ধার’ হলেও, কোথা থেকে উদ্ধার হলো, কীভাবে, কার হেফাজতে ছিল—এসব বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। 

তদন্ত, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ কিংবা জবাবদিহিতার অভাবই যেন প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্যখাতের স্বচ্ছতা ও জনআস্থার প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এসেছে।

বিকে/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর