একই গ্রামে মন্দিরসহ ৫ স্থানে অগ্নিসংযোগ

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:২৮
-6810d410eb75a.jpg)
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরসহ একই গ্রামের পাঁচটি স্থানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন, থানা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এর আগে সোমবার ভোররাতে উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ধুলজুড়ি গ্রামে কে বা কারা একটি মন্দির, একটি করাতকল ও তিনটি বসতঘরের রান্নাঘরে প্রায় একইসময়ে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ধুলজুড়ি গ্রামে অবস্থিত সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মন্দিরের কালি ও শিব প্রতিমার অধিকাংশ পুড়ে গেছে। একইসময়ে মন্দিরের পাশেই সুজন সরকারের গোয়ালঘর, দেবাশীষ রায়ের করাতকল, জাহিদ শেখের রান্নাঘর ও আকবার মোল্যার রান্নাঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আগুন দেখে লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে আলফাডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নেভান। তবে আগুনে তাদের নানা ধরনের মালামাল পুড়ে যায়।
রাতের আঁধারে একই গ্রামের পাঁচটি স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে আগুনের ঘটনায় রহস্যেরও সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, এটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। পূর্ব পরিকল্পনা করেই গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে এই আগুন দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও অল্পের জন্য রক্ষা পায় গ্রামের বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি।
ধুলজুড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, রাতের আঁধারে কে বা কারা মন্দিরে আগুন দিয়ে কালি ও শিব প্রতিমা পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রথমে আমি বিষয়টি দেখতে পেয়ে সবাইকে জানাই।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সুজন সরকার বলেন, আমি তিনটি গরু পালন করার জন্য ২০ হাজার টাকার বিচালি ক্রয় করি। কিন্তু রাতের আঁধারে গোয়ালঘরে আগুন দিয়ে আমার সব বিচালি পুড়িয়ে দিয়েছে। অল্পের জন্য আমার বসতঘর রক্ষা পেয়েছে।
অপর ক্ষতিগ্রস্থ জাহিদ শেখ বলেন, আমি কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করি। আমার রান্নাঘরে থাকা ধান, স্যালোমেশিনের ফিতাসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এদিকে খবর পেয়ে ফরিদপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আজমীর হোসেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল ও আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদসহ বোয়ালমারী সেনাবাহিনী ক্যাম্প কমান্ডারের নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় আনা হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক না-ও হতে পারে। কারণ একইসঙ্গে মুসলিম ধর্মাবলম্বী কয়েকটি বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র এমনটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। প্রকৃত দোষীদের সনাক্তে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
ডিআর/বিএইচ