Logo

সারাদেশ

মাদকাসক্ত ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, আত্মসমর্পণ করতে থানায় বাবা

Icon

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৮

মাদকাসক্ত ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, আত্মসমর্পণ করতে থানায় বাবা

ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পঁচিশ বছর বয়সী ঘুমন্ত মাদকাসক্ত ছেলেকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে।

নিহত ব্যক্তি, উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের নানাইয়া আটিপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৫)। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নে নানাইয়া আটিপাড়াগ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গভীর রাতে ঘুমন্ত ছেলেকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার করার পর বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে বাবা  নিজে পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এবং মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, আনোয়ার হোসেন (২৫) দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। টাকার জন্য প্রায় সময় বাবাকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতো। এক মাস আগে টাকা না পেয়ে বাবার অজান্তে পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন বাবা। গত এক বছর আগে বাবা ছেলে মাদক নিরাময় কেন্দ্র রিহাবে পাঠান। রিহাব থেকে আসার পর পুনরায় বাবাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। টাকা নিয়ে প্রায় সময় বাপ- ছেলের মাঝে ঝগড়া হতো।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে ছিলেন। পাঁচ বছর বিদেশ করে দেশে ফিরেন।দেশে আসার পর ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।মাদকাসক্ত হওয়ার পর থেকে টাকার জন্য বাবাকে অত্যাচার করতো। টাকা না পেলে প্রায় সময় বাবাকে মারধরসহ হত্যার হুমকি দিতেন। এক মাস আগে মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেড়ে পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিয়েছেন ছেলে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে ছেলে গরুর খামারে গিয়ে গরুকে মারপিট করতে থাকে। এ সময় বাবা ছেলেকে নিষেধ করেন। কিন্তু বাবার কথা কর্ণপাত করেনি ছেলে। 

এরপর বাবা রাগান্বিত হয়ে ছেলেকে ঘুষি দেন। ঘুষি দেওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে বাবার উপর চড়াও হন ছেলে ।তাই মনের কষ্টে গভীর রাতে ঘুমন্ত ছেলেকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন বাবা।হত্যার পর সকালে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন বাবা।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন দুই দফা বিদেশে চাকরি করেছেন। প্রথমবার চার বছর সৌদি আরবে ছিলেন। পরবর্তীতে আরও দুই বছরের জন্য মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফেরার পর নেশায় আসক্ত হয়ে যান। নেশার টাকার জন্য আনোয়ার হোসেন বাবা, মা ও বোনকে মারধর করতেন।

আনোয়ার হোসেনের মামা আব্দুল জলিল বলেন, ‘প্রায়ই আনোয়ার হোসেন তার বাবাকে নেশার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। টাকা না দিলে মারধর করতেন তিনি। এসব বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা আনোয়ার হোসেন কে বোঝানো হয়। কিন্তু তিনি দিনকে দিন আরও বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন। নেশার টাকার জন্য বাবা তার জমি বিক্রি করতেও বাধ্য হয়েছেন।’

আরেক স্বজন মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল বেলা তারা জানতে পারেন আনোয়ার হোসেন খুন হয়েছে। আরও জানতে পারেন যে তার বাবা থানায় গিয়ে ছেলের খুনের কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছেন।’

অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিদেশ থেকে ফেরত আসার পর ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।এরপর তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র রিহাবে পাঠান। এক বছর থাকার পর বাড়িতে চলে আসেন। গত এক মাস ধরে টাকার জন্য বাবাকে অত্যাচার করছিল। টাকা না পেয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে দেন।তাই আমি আমার ছেলেকে মাইরা ফেলাইছি।’ 

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ‘বুধবার সকালে অভিযুক্ত বাবা থানায় এসে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

আতাউর রহমান সোহেল/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর