Logo

সারাদেশ

রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

Icon

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১৯:০১

রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে /ছবি : সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একাধিক অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, রাজারহাট শিক্ষা অফিসে কর্মকর্তা আব্দুর রবের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কোনো ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সেটা নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ আদায় করেন তিনি। 

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সম্পর্কের জোরদার ও পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। সিন্ডিকেটের কারণে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ। এই সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা এখন জিম্মি। একাধিকবার উপরমহলে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, রাজারহাটে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল ও এনটিআরসির মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইল ছাড়ানোর জন্য মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেন তিনি। নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ফাইল বা বিএড অথবা সিনিয়র স্কেলের ফাইল টাকা ছাড়া সই করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া ও বিভিন্ন অজুহাতে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিকট থেকে নানা অজুহাতে নিয়মিত উৎকোচ ও উপহার গ্রহণ করেন।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) দেওয়া এক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি (দ্বিতীয় পর্যায় প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উপকরণ ক্রয়ের কোটেশন আহ্বান করা হয়। ওই কাজ তার নিকটাত্মীয়ের এক কোম্পানিকে দিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে গোপনে মিটিং করেন। মিটিংয়ে ওই কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের চাপ দেন তিনি। 

অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মো. রেজাউল হাসানকে নির্দেশ দেন ইউএনও। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। শোনা গেছে, বিভিন্ন উপায়ে সেই তদন্ত আটকে দেন আব্দুর রব।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নওদাবস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামী নেতা রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি।

নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নিজ জেলায় চাকরির সুবাদে আলাদা ক্ষমতা নিয়ে চলেন। নিজের খুশিমতো অফিস করেন। অফিসের সময় শেষ হওয়ার আগেই চলে যান। ফলে অনেক দূর থেকে এসেও তাকে না পেয়ে আমাদের ফিরে যেতে হয়।

এসব বিষয়ে মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি কুড়িগ্রামের জেলা সমন্বয়ক আতাউর রহমান বলেন, একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নিজের জেলায় দীর্ঘদিন থাকা দৃষ্টিকটু। তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

এ ব্যাপারে স্থানীয় শিক্ষাবিদ আখেরুজ্জামান জানান, একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীর্ঘদিন এক অফিসে চাকরি করলে তার পরিধি বিস্তৃত হয়। ফলে যেকোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি করা সহজ হয়। নিজ জেলায় চাকরি করায় দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, অসৌজন্য আচরণ, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করাসহ নানাভাবে উপজেলায় শিক্ষার মান উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রব জানান, আমার সুনাম ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছেন। এগুলো সবই মিথ্যা।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর