Logo

সারাদেশ

যে পাহাড়ে বসে মাদকের হাট

Icon

নুর মোহাম্মদ মিঠু ও সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫, ২১:৫৬

যে পাহাড়ে বসে মাদকের হাট

পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্তিতায় মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি কুমিল্লার লালমাই পাহাড়। যেখানে প্রকাশ্যে চলছে মাদকের বিকিকিনি। ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও বিষয়টি নিয়ে রাও করছে না স্থানীয় প্রশাসন। তবে লালমাই থানা পুলিশ বলছে, সঠিক তথ্য পেলেই কেবল ব্যবস্থা নেন তারা। 

অথচ লালমাই পাহাড়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরালও হয়েছে ইতোমধ্যে। যে কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষাসফরে আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও এখন আর কোটবাড়ী অংশের পাহাড়ে উঠতে চায় না। এসব জেনেও রহস্যজনক কারণে মাদক করাবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বড় ধর্মপুর এলাকা দিয়ে পাহাড়ে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে পাহাড়ি ঝোপঝাড়ের ফাঁকে ফাঁকেই দল বেঁধে গাঁজা সেবন করছে তরুণ-তরুণীরা। ইয়াবা বিক্রি করছে সাদ্দাম ও স্বপন নামের দুই যুবক। 

স্থানীয়রা জানায়, এরা শুধু পাইকারি বিক্রেতা নয়; বরং পাহাড়ের অন্তত ৭-৮টি মাদক আড্ডার নিয়ন্ত্রক। শনিবার (৩ মে) এমন দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লাজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। অথচ রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাদকের জোগান আসে পার্শ্ববর্তী সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া, হাইজ্জাখলা ও বল্লি ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এলাকা থেকে। দিন-রাত মাদক বেচাকেনার এমন পরিস্থিতি সেখানে যেন ‘মাদকের খুচরা বাজার’। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমার বন্ধুরা একে একে নেশায় ঢুকে পড়েছে। পাহাড়ে গিয়ে প্রথমে গাঁজা, তারপর ইয়াবা। এখন কেউ কেউ চোলাই মদও খায়। পরিবার জানে না, কিন্তু আমরাই দেখছি বন্ধুদের ধ্বংস হতে।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদ্দাম ইয়াবা বিক্রি করছে, নজির নামের যুবক তা সেবন করছে, আরেকজন রবিউল গাঁজা টানছে প্রকাশ্যে। অথচ প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা নেই।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেই। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। কেউ ছাড় পাবে না।

এদিকে কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানিয়েছেন, মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। যাদের নাম এসেছে, তাদের ধরতে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। তবে স্থানীয়দেরও সাহসিকতা নিয়ে তথ্য দিতে হবে।

অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজ বলছে, শুধু অভিযান নয়, দরকার জনসচেতনতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সদ্য ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

সূত্র জানায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি মাদকসহ এক ব্যবসায়ীকে ধরে পুলিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আসতে দেরি করায় এলাকাবাসীই শেষ পর্যন্ত দীর্ষ সময় অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। তবে সে সময় পুলিশের এমন পদক্ষেপে এখনো ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

এনএমএম/বিএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর