কাজের খোঁজে দক্ষিণে ছুটছে উত্তরের কৃষিশ্রমিকরা

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১৫:৩৯

ছবি : বাংলাদেশের খবর
উত্তরের জেলা নীলফামারীসহ পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে এখন কৃষিশ্রমিকদের হাতে কাজ নেই। ধান কাটার মৌসুম শুরু হতে আরও ২০-২৫ দিন বাকি। ফলে জীবিকার তাগিদে এসব জেলার শ্রমিকরা দলবেঁধে ছুটছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে।
আসন্ন বোরো মৌসুমে জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম ধান পাকতে শুরু করেছে। এসব অঞ্চলে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। সেই সংকট পূরণে উত্তরের হাজারো কৃষিশ্রমিক ট্রেন, বাস, পিকআপ ও ট্রাকে চেপে ছুটছেন ওইসব এলাকায়।
প্রতিদিন ভোরে নীলফামারী, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের দিনমজুররা জড়ো হচ্ছেন বিভিন্ন রেলস্টেশনে। বিশেষ করে চিলাহাটি, ডোমার, ডিমলা, নীলফামারী ও সৈয়দপুর স্টেশনগুলোতে শ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ছে।
সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর গ্রামের দলনেতা আজগার আলী (৫২) বলেন, ‘আমরা ১০ জনের একটি দল নিয়ে সৈয়দপুর স্টেশনে এসেছি। গন্তব্য আক্কেলপুর। ওখানে আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। মালিকপক্ষ আমাদের থাকা-খাওয়া এবং ভালো মজুরি দেয়। সেখান থেকে আয় করে সংসার চালাই, এমনকি ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করি।’
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহির কৃষিশ্রমিক জামশেদ আলম (৪৬) বলেন, ‘পরিবারে ভাত জোটে না, দাদন ব্যবসায়ীর ঋণও শোধ করতে হয়। তাই নাটোরে ধান কাটতে যাচ্ছি। গত বছর নওগাঁর আত্রাইয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিদিন তিনবেলা খেয়ে ৮০০-৯০০ টাকা আয় হতো। গৃহস্থরা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিল।’
কচুকাটা ইউনিয়নের কৃষিশ্রমিক সহিদুল ইসলাম (৪৫) জানান, ‘এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই শান্তাহারে যাচ্ছি ধান কাটতে। আগেই কথা হয়েছে, ওরা আমাদের থাকার ব্যবস্থাও করেছে। হাজিরাও ভালো দেবে। আশা করি ভালো ইনকাম হবে।’
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। উত্তরের জেলাগুলোতে ধান কাটা এখনো শুরু হয়নি, তাই কৃষিশ্রমিকরা বসে না থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছুটছেন। আসনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী টিকিট ছাড়াই যাতায়াত করছেন।’
নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘কয়েকটি শ্রমিক দলকে অর্ধেক ভাড়ায় বগুড়া, শাহজাদপুর, জয়পুরহাটে পাঠানো হয়েছে। অনেকে নিজেরাও পিকআপ ও ট্রাকে করে ছুটছেন বিভিন্ন জেলায়। আমরাও তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করছি।’
এআরএস