Logo

সারাদেশ

সেতু আছে, রাস্তা নেই—চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী

ঠিকাদার বললেন ‘সত্য বললে বিল আটকে যাবে’

Icon

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১৬:২৪

সেতু আছে, রাস্তা নেই—চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বিত্তিপাড়া থেকে উজানগ্রাম—মাত্র এক কিলোমিটারের ব্যবধানে—দুটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও সেতু দুটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, কবে নাগাদ শেষ হবে নির্মাণকাজ। ফলে জনমনে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অজ্ঞাত কারণে প্রায় দুই বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখেছে। এতে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বর্ষা মৌসুমে এ দুর্ভোগ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অথচ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব ও উদাসীন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কে বিত্তিপাড়া বাজার থেকে ঝাউদিয়া বাজার যাওয়ার পথে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালের ওপর একটি ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়, কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৭০ শতাংশ।

এই সেতু থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে, একই সড়কে কুমার নদীর ওপর আরেকটি ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মিত হচ্ছে, যার জন্য ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এটির কাজও শুরু হয় ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৮ মার্চ। এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র ৭৫ শতাংশ কাজ।

উভয় সেতুর নির্মাণকাজ পেয়েছে ‘এমএনএম অ্যান্ড এসই (জেভি)’ নামের একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটির প্রোপাইটর পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই সড়কটি কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ বিত্তিপাড়া-ঝাউদিয়া সড়ক ব্যবহার করেন। সেতু দুটি অসম্পূর্ণ থাকায় সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উজানগ্রামে জিকে খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সেখানে কোনো সাইনবোর্ড নেই। এমনকি ঠিকাদার বা এলজিইডির কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিকেও পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ভ্যানচালক রাসেল হোসেন বলেন, ‘প্রায় দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতু না থাকায় যাতায়াতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।’

বিত্তিপাড়া সেতু থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে কুমার নদীর ওপর নির্মাণাধীন অন্য সেতুটিও অনুরূপ অবস্থায় পড়ে আছে। এ জায়গায় দুজন শ্রমিক মালামাল পাহারা দিচ্ছেন, কিন্তু তারা পরিচয় দিতে বা কিছু বলতে রাজি হননি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি একসময় বাস ও ট্রাক চলাচলের উপযোগী ছিল। এখন সড়কের অবস্থা বেহাল। পুরনো স্টিল ব্রিজটিও ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির সতর্কতা জানিয়ে পাশে সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। বাস চলাচল বন্ধ, আর ভারী যানবাহন চলছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

ঠিকাদার নুরুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে কাজের গতি ভালোই ছিল। পরে ব্যাংকসংক্রান্ত কিছু জটিলতা এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। সত্যি কথা বলতে পারছি না, বললে বিল আটকে দেবে।’

তিনি স্পষ্টভাবে কিছু না বললেও একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। এ কাজে সহায়তা করেন উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) আজিজুল হক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলার নাম ব্যবহার করে ৫% ঘুষ দাবি করেন। অনেকে প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলাকে ‘মি. ফাইভ পারসেন্ট’ বলেও অভিহিত করেন।

এই বিষয়ে এসও আজিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন। উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি কী করেছেন আমি জানি না। আমি শুধু জানি, জনগণ দুর্ভোগে আছে এবং আমি সেতু দুটি দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।’

তিনি দাবি করেন, ‘৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, মে-জুনের মধ্যেই সেতু দুটি খুলে দেওয়া যাবে।’

এলজিইডির কুষ্টিয়া জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুটি সেতুরই প্রায় ৯৫% কাজ শেষ হয়েছে। এক পাশে মাটি ফেলা হয়েছে, কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। ঠিকাদার সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। কেউ গাফিলতি বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে, প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর