৩ অফিসার নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১৭:৫০
-6818a6063d2f4.jpg)
মাত্র তিনজন মেডিক্যাল অফিসার নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে সঙ্গী করে ধুঁকে ধুঁকে চলছে টাঙ্গাইলের সখীপুরের ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি ওয়েবসাইটে ২০ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নাম থাকলেও বাস্তবে নিয়মিত রোগী দেখছেন মাত্র চারজন মেডিক্যাল অফিসার। এর মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। পাঁচজন কনসালটেন্টের মধ্যে কেউ কেউ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন, কেউবা চার দিন আসেন। বাকি দিনগুলোতে তাদের দেখা মেলে বেসরকারি ক্লিনিকে—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ছাড়াও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রায়শই ভুল চিকিৎসা প্রদান, যেসব রোগের পরীক্ষা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই হওয়ার কথা সেগুলো চিকিৎসকের পছন্দমতো ক্লিনিক থেকে করাতে বাধ্য করা, রোগীর প্রেসক্রিপশন লেখার সময় চিকিৎসকের পাশে ওষুধ কোম্পানির লোক বসে থাকা, সেবা প্রত্যাশীদের সাথে দুর্ব্যবহার, আবাসিক রোগীদের মানসম্মত খাবার না দেওয়া, আবাসিক রোগীদের বিছানায় ছাড়পোকার উপদ্রব ও নোংরা টয়লেটসহ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই।
রোববার (৪ মে) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরেজমিন ঘুরে এসব অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সময় কথা হয় অন্তত ১০ জন সেবাপ্রত্যাশীর সাথে। কেউই সেবায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, ‘কম খরচে চিকিৎসা করাতে এখানে আসি, কিন্তু ডাক্তাররা টেস্ট করানোর জন্য ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। গরিব মানুষ, অত টাকা কই পাই?’
অভিযোগ রয়েছে, কাটাছেঁড়া সেলাই করার সুতা রোগীকে কিনে আনতে হয়, প্লাস্টার করতে গেলেও দিতে হয় টাকা। এক বছরের বেশি সময় ধরে এনেস্থেসিয়া মেশিন নষ্ট থাকায় কোনো সিজার করা যাচ্ছে না। সরকারি কোয়ার্টারে পাঁচটি ভবনের মধ্যে বসবাস করছেন কেবল আরএমও। বাকিগুলো নাজুক ও বসবাসের অযোগ্য।
চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসক এশারত আলী, গাইনি কনসালটেন্ট আমরিন সালাম, অর্থোপেডিক্সের রুহুল আমিন, শিশু বিশেষজ্ঞ আফরোজা বেগম এবং মেডিক্যাল অফিসার দিনা খাতুন—তাদের বেশির ভাগই অনিয়মিত। রাজিয়া সুলতানা নামের আরেক চিকিৎসক মাসখানেক ধরে অনুপস্থিত। অন্যদিকে আয়েশা সিদ্দিকা মাস দুয়েক আগে কানাডা চলে গেছেন। পদত্যাগ করেছেন, তবে এর আগে তিনি বছরখানেক অনুপস্থিত থেকে বেতন নিয়েছেন কিনা—তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
সম্প্রতি প্রতিবেদকের হাতে আসা দুটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ফরিদ হোসাইন ও রায়হান নির্দিষ্ট ক্লিনিকের নাম উল্লেখ করে রোগীকে সেই ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে পাঠাচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসক রায়হান বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো ক্লিনিকে পাঠাই না, আশপাশের সব ক্লিনিকের নামই বলি।’ এসব ক্লিনিকে বসে তিনি নিয়মিত চা খান বলেও জানান। ক্লিনিকে পাঠানোর কারণ—বিকেলে হাসপাতালে জনবল কম থাকে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ছাড়া আএমও মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আরএমও হওয়ার পর থেকেই তিনি রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন। এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ফরিদ হোসাইন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের হসপিটাল থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে তারা (ওষুধ কোম্পানির লোকেরা) যেন কোনো কারণ ছাড়া হসপিটালে না ঢোকে। আর আমরা কোনো ক্লিনিকের নাম বলি না। তবে ১৫ বছর ধরে এখানে থাকি। আমার এলাকা এখানে। আমার আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজন যারা আসে তাদেরকে যেখানে টেস্ট ভালো হয় সেখানে যেতে বলি।’
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিযোগের তালিকা যেমন বাড়ছে, তেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রেহানা পারভীন বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। দিলে ব্যবস্থা নেব।
মুহাম্মদুল্লাহ/বিএইচ