
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট (অব.) মো. শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যা মামলায় তার ছোট ছেলেসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে এক আসামিকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদাত হোসেন প্রামাণিক এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিহতের ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, মো. জাহের আলী ও মো. আনসার আহমেদ। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, মাইক্রোবাসচালক মো. বোরহান উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মো. ইসমাইল হোসেন রানুকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের অ্যাডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি।
সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আনছারুজ্জামান জানান, এ মামলায় ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তারা সবাই পলাতক।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম চৌধুরীর চার মেয়ে ও দুই ছেলেসন্তান রয়েছেন। দুই ছেলে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। মেয়েদের মধ্যে একজন ঢাকায় এবং অপরজন সিলেটে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।
বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী পেশাগত কারণে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে মুন্নাকে নিয়ে শামসুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট মহানগরের মীরবক্সটুলা এলাকার আজাদী-১১০ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে নিজ বাসা থেকে নিখোঁজ হন শামসুল ইসলাম। এরপর মুন্না কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পরে ২২ জুলাই মুন্না নিজেই আত্মগোপনে চলে যান। ওই সময় তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৪ আগস্ট শামসুল ইসলামের বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর র্যাব-৯ আনসার, বোরহান ও রানুকে আটক করে। তাদের মধ্যে আনসার ও বোরহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে, দেড় মাসের মাথায় সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা নদী থেকে শামসুল ইসলামের মরদেহের কিছু অংশ, পাঞ্জাবি ও টুপি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শামসুল ইসলামের বলেই নিশ্চিত হওয়া যায়।
পরবর্তীতে জানা যায়, ঘটনার দিন রাতে (শবেবরাতের রাতে) নামাজরত অবস্থায় অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে তার ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না পেছন থেকে প্রথমে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। আঘাতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় গাড়িতে তুলে সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর এলাকার সুরমা নদীতে ফেলে দেন নিজেরই ছেলে। এর কয়েকদিন পর সুনামগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে সুরমা নদীতে শামসুল ইসলামের দেহাংশ পাওয়া যায়।
লাশ গুমের ঘটনায় মুন্নাকে গাড়িচালক মো. বোরহান উদ্দিন এবং মো. জাহের আলী ও মো. আনসার আহমেদ সহযোগিতা করেন।
বাসার একটি অংশ মুন্নার নামে লিখে না দেওয়ায় তিনি বাবাকে হত্যা করেন বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র।
ডালিম/এমবি