কুমিল্লার উন্নয়নে জেলা প্রশাসকের চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ২০:২০

ছবি : বাংলাদেশের খবর
কুমিল্লা শহরে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বুধবার (০৭ মে) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, কুমিল্লা ক্লাবটিকে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে উদ্ধার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়েছি। আর টাউনহল মার্কেটের আয় বিগত সরকারের সময়ে কোনো এক ব্যক্তি বিশেষের কাছে যেতো। ৫ আগস্ট পরবর্তী সরকারের সময়ে প্রতি মাসে ৬ লক্ষাধিক টাকা মার্কেটের অ্যাকাউন্টে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আসার পর কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ১৪ হাজার টাকার মতো পেয়েছি। অথচ কর্মচারীদের মাসে বেতন আসত ১ লাখ টাকা। এখন আমি ৮ মাসের বেতন পরিশোধ করে ১৫ লাখ টাকা জমা রেখেছি। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়ামের পাশের ১৫টি দোকান ৫০ বছরের লিজ নিয়েছিল, সেসব দোকানের ভাড়া ৪ গুণ বৃদ্ধি করে স্টেডিয়ামের ফান্ডিংয়ে জমা হচ্ছে।
মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্র লিখিত বক্তব্য পাঠ ও জনগণের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী কুমিল্লা ক্লাবের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রকৃত রূপদানে এডহক কমিটি করা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষা খুবই চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে তিনি বলেন, উজিরদিঘীর ভরাট নিয়ে রেকর্ডের মালিক আবেদন নিয়ে এসেছিল। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভরাট করা থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার এসব কাজে অনেক বাধা আসে। আমার ২ জন অফিসার হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছিল। ফসলি জমি রক্ষার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমিরুল কায়সার বলেন, সদর দক্ষিণে মালিকানাধীন পুকুর রাতের আঁধারে অর্ধেক ভরাট করা হয়েছিল। খবর পেয়ে পরিবেশ আইনে মামলা ও পুকুরটি পুনরায় খননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর ২২৯টি অভিযান করে ১ কোটি ৫৪ হাজার অর্থদণ্ড ও ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে ২৩ জনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চিত্তবিনোদনের স্বল্পতা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, কুমিল্লায় চিত্তবিনোদনের স্বল্পতা প্রকট। এখানে পার্ক বা সবুজায়ন নেই বললেই চলে। ২০ একর জায়গায় পূর্বের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা ছিল, যেটা এখন বন্ধ।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আধুনিক ডিসি পার্ক করার জন্য ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ রোপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমিরুল কায়সার বলেন, নগরীতে যানজট নিরসনে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ৪০ হাজার অটোরিকশা শহরে চলছে। যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ অটোরিকশা। অটোরিকশা কমিয়ে নির্দিষ্ট আইডি কার্ড ও ড্রেসের মাধ্যমে শহরে চলাচল ও বাকি চালকদের জন্য অন্যত্র কর্মসংস্থান বা বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসন বলেন, কুমিল্লায় ১০৫ কিলোমিটার হাইওয়ে রয়েছে। মহাসড়কে কুমিল্লা অংশে প্রায় ১২টি ছোট-বড় বাজার রয়েছে। এসব বাজার থাকায় যানজট লেগেই থাকে। আবার অনেকে আন্দোলন করে যানজট সৃষ্টি করে মানুষকে কষ্ট দেয়। তাদের উচিত শান্তি বজায় রেখে মহাসড়কে এড়িয়ে শান্তিভাবে আন্দোলন করা। ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসনে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেছে।
সর্বশেষ কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া, প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল হক ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা এমরান প্রমুখ।
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমবি