Logo

সারাদেশ

যাদুকাটায় নিষেধাজ্ঞায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক কর্মহীন

Icon

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ২১:০১

যাদুকাটায় নিষেধাজ্ঞায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক কর্মহীন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত নদী যাদুকাটায় বালু ও পাথর উত্তোলনে আইনি জটিলতার কারণে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এক মাস ধরে তারা নদীতে কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে কাজের সন্ধানে ছুটছেন।

জানা গেছে, যাদুকাটা নদীতে প্রতিবছর উজানের ঢলে আসা কয়লা, বালু ও পাথর উত্তোলন করে আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করতেন। এসব গ্রামের মধ্যে মাহারাম, বড়গোপ, লাউড়েরগড়, ঢালারপাড়, বিন্নাকুলি, ঘাগড়া, মানিগাঁও, সুন্দর পাহাড়ি ও রাজাই চাঁনপুর উল্লেখযোগ্য।

নিষেধাজ্ঞার আগে যাদুকাটা নদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারো শ্রমিক কোদাল, বেলচা ও বারকি নৌকা নিয়ে বালু উত্তোলনে ব্যস্ত থাকতেন। এখন সেখানে নীরবতা, আর চরম দারিদ্র্য গ্রাস করেছে এলাকাবাসীকে। কর্মহীনতার কারণে অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মানিগাঁও গ্রামের শ্রমিক মোতালিব মিয়া বলেন, ‘এই নদীতে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার টাকা রোজগার করতাম। এখন কিছুই নেই, খুব কষ্টে আছি।’

ঘাগটিয়া গ্রামের আল-আমিন জানান, ‘নদীর সঙ্গে জড়িত ব্যবসা ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।’

গড়কাটি গ্রামের মুক্তার হোসেন বলেন, ‘নদীতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। দ্রুত আইনি জটিলতা নিরসন করে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ দিতে হবে।’

সূত্র জানায়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে যাদুকাটা–১ এবং যাদুকাটা–২ নামের দুটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যাদুকাটা–১ ইজারা নেন তাহিয়া স্টোন ক্রাশারের মালিক নাসির মিয়া (৩৩ কোটি টাকা), এবং যাদুকাটা–২ ইজারা নেন মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রুবেল মিয়া (৫৫ কোটি টাকা)।

তবে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ছয় মাসের জন্য ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে আপিল বিভাগ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই মাসের মধ্যে রিট নিষ্পত্তি করতে হবে এবং এই সময়ে মহাল দুটি থেকে কোনো ধরনের উত্তোলন করা যাবে না।

যাদুকাটা–২ এর ইজারাদার মো. রুবেল মিয়া বলেন, ‘সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও নদীতে যেতে পারছি না কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে। তারা শ্রমিকদের কথা না ভেবে প্রতিবছরই রিট করে আমাদের বাধা দেয়।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, “আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রিট নিষ্পত্তি হলে শ্রমিকদের মুখে আবারও হাসি ফুটবে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে যাদুকাটা নদীতে উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। আইনি জটিলতা দূর হলে আবারো শ্রমিকরা নদীতে কাজ করতে পারবেন।’

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর