‘সাংবাদিক’ দাবি ‘প্রতারক লিটনের’, গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিলেন আদালত

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ২১:১৭

ফাইল ছবি
আদালতে আনা হলে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। বলেন, ‘আমি সাংবাদিক। আমি কেন হত্যা মামলার আসামি হলাম? আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’ তবে আদালত তার এসব কথা আমলে না নিয়ে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
গত ৫ আগস্ট ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মো. জাভেদ। তার মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়।
মামলার বাদী সিকদার লিটন নিজেকে নিহতের খালাতো ভাই পরিচয় দেন। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম হওয়ায় তা নজরে আসে ভুক্তভোগী জাভেদের পরিবারের। তাদের অজান্তে এমন মামলা হওয়ায় অবাক পরিবারটি। নিরুপায় হয়ে নিহত জাভেদের ভাই মাঈনুদ্দীন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা তদন্ত করছে থানা পুলিশ।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, ‘জিডির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুতই রিপোর্ট আদালতে দাখিল করব।’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ‘তদন্ত শেষের দিকে। পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সিকদার লিটনের করা ওই মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তবে এই মামলাকে পুঁজি করে বেশ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও প্রতিপক্ষদের আসামি করার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে লিটনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। তিন মাসে শুধু তার বিকাশে লেনদেন হয়েছে সাড়ে ২২ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের খুরকি গ্রামের আব্দুল সোবহানের ছেলে জাবেদ গুলিবিদ্ধ হন। পরে ১৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ বিষয়ে জাবেদের পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। অথচ লিটন নিজেকে জাবেদের খালাতো ভাই দাবি করে ঢাকার আদালতে একটি সিআর মামলার আবেদন করেন। এমন ঘটনা জানাজানি হলে নিহত জাবেদের ভাই মাইনুদ্দিন মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে মাইনুদ্দিন উল্লেখ করেন, সিকদার লিটন নামের ব্যক্তির সঙ্গে নিহত জাবেদের পরিবারের কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এমনকি তাকে কোথাও কোনো মামলার আবেদন করার অনুমতি, সম্মতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়নি।
সিকদার লিটন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক সিকদারের ছেলে। জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাসহ তার নামে দুটি মামলা রয়েছে— ঢাকার ভাটারা ও মোহাম্মদপুর থানায়।
আলফাডাঙ্গার স্থানীয়রা বলছেন, সিকদার লিটন আপাদমস্তক একজন প্রতারক। যেখানে যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে সুবিধা নেওয়া যায় সেটাই করেন। কখনো এমপির এপিএস, কখনো ব্যবসায়ী, কখনো সরকারি কর্মকর্তা, কখনও সাংবাদিক পরিচয় দেন তিনি। এসব পরিচয়ের আড়ালে মূলত তিনি ভয়ংকর প্রতারক। প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত সিকদার লিটনের অত্যাচারে তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে গ্রামবাসী।
নিজের মা-বাবা মারা গেলেও তাদের জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। এমনকি নিজের শ্বশুর জাপান মুন্সির নামে হয়রানিমূলক পাঁচটি মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন তিনি। ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুর হোসেনের এপিএস পরিচয় দিতেন সিকদার লিটন। তার বিরুদ্ধে দেড় ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।
সিকদার লিটন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। এবার আদালতের সামনে নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। একইসঙ্গে আদালতকে বিভ্রান্তি করারও চেষ্টা করেন তিনি। বুধবার (৭ মে) ভাটারা থানার একটি হত্যা মামলায় সিকদার লিটনকে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানির তারিখ ধার্য ছিল। সকালে তাকে আদালতে আনা হলে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করেন। বলেন, ‘আমি সাংবাদিক। আমি কেন হত্যা মামলার আসামি হলাম? আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’ তবে আদালত তার এসব কথা আমলে না নিয়ে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মামলা ভিন্নখাতে নিতে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকতে পারেন লিটন। যাতে ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলাকে বিতর্কিত করা যায়। যা ফ্যাসিস্ট পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে সুবিধা দেওয়া চেষ্টা। সিকদার লিটন বহির্বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের ফাঁসাচ্ছে। তার এমন হীন-চরিতার্থ যাতে সফল না হয় সেটা দায়িত্বশীলদের দেখতে বলছেন তারা।