মরণব্যাধিতে আক্রান্ত শিশু আব্দুল্লাহর বাঁচার আকুতি

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১৪:১০

মরণব্যাধিতে আক্রান্ত শিশু আব্দুল্লাহ। ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাগেরহাটের রামপালের হাওলাদার বাড়ির আকাশেও একসময় খুশির ঝিলিক ছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নূরনবী ও মুসলিমা বেগমের কোল আলো করে এসেছিল ফুটফুটে ছেলে সন্তান আব্দুল্লাহ।
কিন্তু সেই হাসি আজ বেদনার অশ্রুতে ভিজে। মাত্র দুই বছর বয়সে নেফ্রোটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ১১ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ গত নয় বছর ধরে অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে দিশেহারা পরিবার এখন সমাজের দয়ালু মানুষের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে। ছোট্ট আব্দুল্লাহর বাঁচার আকুতি যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে আকাশ, প্রয়োজন শুধু একটু সহানুভূতির স্পর্শ।
আব্দুল্লাহ হাওলাদার, এক ছোট্ট জীবন, যা শুরুতেই থমকে গেছে। জন্মের পর থেকেই কঠিন রোগের সাথে লড়াই করে চলেছে সে। কিডনি, লিভার ও ফুসফুসের জটিলতায় জর্জরিত ছোট্ট শরীর। পড়াশোনা তো দূরের কথা, বন্ধুদের সাথে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলাও করতে পারে না সে। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা শিশুটির কষ্ট যেন থামার নয়। স্বপ্ন ছিল কুরআনের হাফেজ হবে স্বপ্ন যেন আকাশচুম্বী।
‘আমি বাঁচতে চাই,’ কান্না ভেজা কণ্ঠে বললেন আব্দুল্লাহ হাওলাদার। ‘আমার লিভার, ফুসফুসে জটিল সমস্যা। রক্তে লবণের মাত্রা স্বাভাবিক নেই, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। অসহনীয় জ্বালাপোড়া আর ব্যথায় দিনরাত ছটফট করি। শরীর ফুলে গেছে। চিকিৎসায় বাবার সর্বস্ব চলে গেছে। এখন আমার বাবা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে এখন সমাজের সহৃদয়, বিত্তবান মানুষদের দিকেই তাকিয়ে আছি। প্লিজ, আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। একটু সাহায্য পেলেই হয়ত নতুন জীবন পেতে পারি।’
কান্নায় ভেঙে পড়েন নূরনবী হাওলাদার। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘নয় বছর ধরে আমার একমাত্র ছেলেটা এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে। ঠিকমতো বসতে পারে না, হাঁটতে পারে না, এমনকি শুয়ে থাকতেও কষ্ট হয় তার। প্রতিদিন ওর চিকিৎসার জন্য লাগে ৮০০ টাকার ওষুধ। অথচ আমি অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালাই। ছেলের চিকিৎসার খরচ তো দূরের কথা, ওষুধ কেনাটাই আমার কাছে পাহাড়সম।’
তিনি আরও জানান, ‘ছয় মাস আগে অনেক কষ্টে ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা বলল, সঠিক চিকিৎসা করাতে হলে দুই-আড়াই লাখ টাকা লাগবে। এত টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে স্বপ্নের মতো। কী করবো? কার কাছে যাবো? একমাত্র সন্তানের এই অবস্থা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’
আব্দুল্লাহর মা মুসলিমা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘ ১ যুগ নিঃসন্তান থাকার পর আমাদের জীবনে আলো হয়ে আসে আমার একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ। ওর মুখে প্রথম হাসি, প্রথম হাঁটা সবকিছু যেন ছিল স্বর্গীয় আশীর্বাদ। ভাবতাম, তাকে কোরআনের হাফেজ বানাবো, আল্লাহর রাস্তায় নিবেদন করবো। কিন্তু আজ আমার সেই স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলেটা এখন প্রতিদিন চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছে, আমরা কিছুই করতে পারছি না। চিকিৎসার অভাবে ওর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমার শুধু একটাই চাওয়া আমার ছেলেটা যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যেন আমাদের দিকে তাকায়। সমাজের ধনী ব্যক্তিরাও যদি একটু সহানুভূতি দেখাতো, তাহলে হয়ত আমার সন্তানটাকে বাঁচানো যেত।”
স্থানীয় মো.জাবের বলেন, ছোট্ট বাচ্চাটার কষ্ট সহ্য করা যায় না। নূরনবী চাচা আব্দুল্লাহকে কাঁধে করে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। তার অবস্থাও খুব খারাপ। বিত্তবান ও প্রভাবশালীরা যদি একটু এগিয়ে আসেন, তাহলে আব্দুল্লাহ হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।"
স্থানীয় রহিম শেখ বলেন, আব্দুল্লাহর পরিবার খুব অসহায়। এই মুহূর্তে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন এই শিশুটির সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. স্বাগতম বিশ্বাস বলেন, আব্দুল্লাহ নেফ্রোটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই তার বাড়ি হওয়ায় অসুস্থ বোধ করলে প্রায়ই এখানে চলে আসে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি তাকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার। তবে মূলত তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন।
১১ বছরের আব্দুল্লাহর জীবন আজ সংকটাপন্ন। তার পরিবারের আকুতি, সমাজের হৃদয়বান মানুষেরা যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এই ছোট্ট জীবনটিকে বাঁচিয়ে তোলেন। একটু সহানুভূতি আর আর্থিক সহায়তা ফিরিয়ে দিতে পারে আব্দুল্লাহর মুখে হাসি, সমাপ্তি ঘটাতে পারে দীর্ঘ ৯ বছরের অসহ্য যন্ত্রণার।
শেখ আবু তালেব/এমআই