রেলওয়ে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে ১৫৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ০৮:৩১

রেল কারখানায় মেরামতের জন্য নিয়ে আসা যাত্রীবাহী কোচের বগি | ছবি : বাংলাদেশের খবর
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করা শত শত মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। জনবল সংকট ও কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের বৃহত্তম এ রেলওয়ে কারখানার কার্যক্রম।
কারখানা সূত্র জানায়, ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম-বেঙ্গল রেলপথ ঘিরে স্থাপিত হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ১১০ দশমিক ২৯ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এ কারখানায় রয়েছে ২৭টি শপ। এখানেই ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং মালবাহী ওয়াগন মেরামতের কাজ হয়ে থাকে।
বর্তমানে কারখানায় মোট অনুমোদিত পদ রয়েছে ২ হাজার ৮৫৯টি। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৭১৬ জন। শূন্য রয়েছে ২ হাজার ১৪৩টি পদ। জনবল সংকটের কারণে প্রতিদিনের মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাচ্ছে না। ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রতিদিন তিনটি কোচ মেরামতের টার্গেট থাকলেও বাস্তবে মেরামত হচ্ছে মাত্র দুটি করে।
কারখানার ২৭টি শপে রয়েছে ৭৪০টি মেশিন। কিন্তু সেগুলো চালানোর মতো প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নেই। এর ফলে কাঁচামালের জোগানও সময়মতো মিলছে না। এতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এখানে রেলের স্টিম রিলিফ ক্রেইন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কোচ-ওয়াগন মেরামত ছাড়াও ১ হাজার ২০০ ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ (নাট, বল্ট, বুশ, চেইন, গিয়ার) তৈরি হয়। কিন্তু জনবল ও কাঁচামালের ঘাটতিতে সেই উৎপাদনও এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারখানাটির আধুনিকায়নে নেওয়া হয় ১৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি ওয়ার্কশপ সংস্কার, ৪৩ ধরনের মেকানিক্যাল ও ১৩ ধরনের ইলেকট্রিক্যাল মেশিন প্রতিস্থাপন, ওভারহেড পানির ট্যাংক ও ডিপ-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। কিন্তু বাজেট ও জনবল না থাকায় এসব আধুনিক যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা শূন্যে নেমে এসেছে।
কারখানার ক্যারেজ শপের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, বেশিভাগ সময় দরপত্র জটিলতায় পড়ে মালপত্র সরবরাহ আটকে যায়। সময়মতো কাঁচামাল না পাওয়ায় কাজ ব্যাহত হয়। আবার কখনো নিম্নমানের মালামাল চলে আসে, যা ফেরত দিতে গিয়ে অপচয় হয় কর্মঘণ্টা ও বিদ্যুতের।
তিনি বলেন, ক্যারেজ শপে ৩৯৫টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৮৫ জন। জনবল সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মেইনটেন্যান্স শিডিউল ভেঙে পড়ছে। বিদেশ থেকে আনা নতুন ট্রেনের অ্যাসেম্বলিং কার্যক্রমও বিলম্বিত হচ্ছে।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একটি কোচ চার বছর পরপর সাময়িক এবং ১২ বছর পর সাধারণ সংস্কার করার কথা। কিন্তু জনবল ও কাঁচামালের অভাবে বহু কোচ বছরের পর বছর মেরামত ছাড়াই পড়ে আছে। দ্রুত শূন্যপদে নিয়োগ ও কাঁচামালের সঠিক জোগান নিশ্চিত করলেই কারখানাটি আবার পুরোদমে সচল হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, সর্বশেষ ২০২৩ সালে ২৮৯ জনকে খালাসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরও বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের বাইরে ওভারটাইম করে উৎপাদন চালিয়ে রাখছেন। তবে এভাবে দীর্ঘদিন চালানো সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও শুধু আশ্বাসই মিলছে, বাস্তবে কোনো অগ্রগতি নেই। জনবল নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ পেলে সৈয়দপুর কারখানা আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে।