চকরিয়ায় এলজিইডির ৮ কোটির প্রকল্পে হরিলুটের অভিযোগ

চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১০:৪৯

কক্সবাজারের চকরিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)–এর একটি প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি গ্রামীণ সংযোগ সড়কে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং প্রকৌশলীদের গাফিলতির অভিযোগ এনে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এলজিইডির অধীনে ‘গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্প (আর.সি.আই.পি)’ এর আওতায় এডিবি ও জিওবি’র অর্থায়নে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী পশ্চিম বড়ার রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে ৫.৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভেওলা-ঢেঁমুশিয়া-কোনাখালী-বাঘগুজারা (পেকুয়া সংযোগ) সড়কের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৫ টাকা।
মূল ঠিকাদার ইউটি মং এই কাজটি পান। পরে তিনি উপ-ঠিকাদার হিসেবে কাজটি দেন কক্সবাজারের ‘সেলিম এন্ড ব্রাদার্স’-এর মালিক মো. সেলিম রেজাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, ইটের খোয়া ও কাঁদামাটিযুক্ত লবণাক্ত বালু। রাস্তার গাইডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে মাটির উপরিভাগ থেকে, যা প্রকৌশল নিয়মের সম্পূর্ণ বাইরে।
স্থানীয়রা জানান, এসব অনিয়মের বিষয়ে বারবার অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। এমনকি সাইটে কোনো প্রকৌশলী বা তদারক কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। পায়ে চাপ দিলেই ইট ভেঙে যাচ্ছে।
চোখে পড়ার মতো অনিয়মের মধ্যে রয়েছে, বক্স কাটিংয়ের পর সেই মাটি দিয়েই বক্স ভরাট, রোড রোলারের ব্যবহার না করা, লবণাক্ত পানি ব্যবহার, নিম্নমানের ইট এবং খোয়া ও সিমেন্ট ব্যবহার।
স্থানীয় বাসিন্দা মুবিনুল হক, ছৈয়দ করিম, রবিউল ইসলামসহ অনেকে বলেন, এলজিইডি কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের যোগসাজশে কাজটি নিম্নমানের হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সায়েম বলেন, টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী নয়, বরং অনুমোদনহীন উপকরণ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘সেলিম এন্ড ব্রাদার্স’-এর স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম রেজা বলেন, কাজের শুরুতে কিছু ২ নম্বর ইট এসেছিল, তা দিয়ে কাজ না করতে বলা হয়েছে। বাকি সব নিয়ম মেনেই হচ্ছে। অফিস আমাদের কাছ থেকে শতভাগ কাজ বুঝে নিচ্ছে।
এলজিইডির চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের সহকারী প্রকৌশলী মিরাজুল ইসলাম কাজটির তদারকি করছেন। এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। অনিয়ম অনিয়ম করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, সরকার যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে, সেখানে মাঠ পর্যায়ের প্রকল্পে এমন বেহাল অবস্থা দুঃখজনক। তারা এ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
- মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম/এটিআর